২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৯-২০

মধ্যবিত্তকে ফেলবে আরো চাপের মুখে

-

অপেক্ষাকৃত কম দীর্ঘ বাজেট বক্তব্যে প্রধানত সরকারের অর্থনৈতিক অর্জনের গুণগানের মধ্য দিয়ে ঘোষিত হলো এবারের বাজেট। এবারের বাজেট ঋণনির্ভর হলেও টাকার অঙ্কে এটি বাংলাদেশের বড় আকারের বাজেট। এবারের বাজেটের পরিমাণ ৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা। তেমনি এটি সবচেয়ে বড় আকারের ঘাটতি বাজেটও। বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ১,৪৫,৩৮০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২৭.৭৮ শতাংশ।
এবারের বাজেটেও অঘোষিত কালো টাকার বিশেষ সুযোগ আছে। অর্থমন্ত্রীর চোখে দেশে বৈষম্য না থাকলেও, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করায় বাজেটে নেই কোনো পদক্ষেপ। এ বাজেট নিশ্চিতভাবেই চাপে ফেলবে দেশের মধ্যবিত্তকে। কারণ, এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর সুনজর ধনীদের দিকে। বাজেটে ধনীদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু ছাড়। স্বপ্নিল এ বাজেটে আছে করের জাল বিস্তারের পদক্ষেপ। সবকিছু মিলে সবচেয়ে বড় অঙ্কের ও বড় ঘাটতির বাজেট বাস্তবায়নে একটা চ্যালেঞ্জ থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ বাজেটের ফলে কোনো কিছুরই দাম বাড়বে না। কথাটি তিনি ঠিক বলেননি। এ বাজেটের ফলে দাম যেমন বাড়বে, তেমনি দাম কমবেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে। অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রস্তাবিত বাজেট গতানুগতিক, আগের বারের ধারাবাহিকতা ও রিপিট চলেছে। তাদের মতে, বাজেট কংক্রিট কিছু নেই। প্রস্তাবিত বাজেটে যে আয়ের বিরাট অঙ্ক, তা অর্জনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বাজেট জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধব নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, সার্বিকভাবে বাজেটের লক্ষ্যগুলো অর্জন করার, কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে এটি একটি অসম্পূর্ণ বাজেট। সুষ্ঠু তদারকি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব না হলে প্রতি বছরের মতো এবারের বাজেট বাস্তবায়ন করা যাবে না।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, দেশের সাধারণ মানুষ কালো টাকার পক্ষে কোনো সুযোগ দিতে না চাইলেও এবারের বাজেটে কালো টাকার মালিকদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে। তারা এখন থেকে কোনো ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়েই বিনিয়োগ করতে পারবেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কর্মসংস্থানের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্পস্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগের অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর পরিশোধ করে বিনিয়োগ করা যাবে। বিনিয়োগ করা এই অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না।
ভুল নীতির কারণে এবারের বাজেটটিও ঋণভারে জর্জরিত। বাজেটের আকার বড় হচ্ছে, বাড়ছে সরকারের ব্যয়ও। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাজেটে বাড়ছে ঘাটতির পরিমাণ। আর ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে ঋণের অর্থে। এর ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে ঋণের পরিমাণও। ফলে আগামী অর্থবছরে বাজেটে সরকারকে বাধ্য হয়ে বেশির ভাগ অর্থ ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে হয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে, যা অনুন্নয়ন বাজেটের একক এ খাত হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত, যার পরিমাণ ১৮.৩ শতাংশ। আর সামগ্রিক বাজেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ খাত, যার পরিমাণ ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।
এ বাজেটে মধ্যবিত্তের ওপর চাপের বিষয়টি প্রবল। ফেসবুক, ইউটিউব মূলত ব্যবহার করেন মধ্যবিত্ত। আর এজন্য তাদের দরকার একটি স্মার্টফোন। কিন্তু স্মার্টফোন আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আরো দুঃসংবাদ রয়েছে আপনার জন্য, যদি আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, ইন্টারনেট চালান। সেখানেও এ বাজেটের কারণে খরচ বাড়বে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে প্রদত্ত সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর খরচ বাড়বে। আবার সিম কার্ডের কর ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে ভ্যাটের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি নিত্য ব্যবহার্য কিছু পণ্যের ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। আবার নিত্যব্যবহার্য কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
সার্বিক দিক বিবেচনায় বাজেটটি গতানুগতিক এবং তা মধ্যবিত্তের ওপর নতুন করে চাপ বাড়াবে। সুবিধাপ্রাপ্তরা হচ্ছে উচ্চশ্রেণী ও নিম্নশ্রেণী। এর ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়বে। সমাজে বৈষম্য বেড়ে চলা কমানোর কোনো পদক্ষেপও নেই এ বাজেটে।

 


আরো সংবাদ



premium cement