২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৪১ জেলায় প্রায় ৩০ হাজার ঘটনা

নদীগুলো দখলমুক্ত করুন

-

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি) সারা দেশের ২৯ হাজার ৪৫৯ জন দখলদারকে চিহ্নিত করেছে। ৪১টি জেলার ডিসিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অবিলম্বে নদনদীকে বেআইনি দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ অভিযানের প্রয়োজনে আসন্ন অর্থবছরে পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
একটি সহযোগী দৈনিকের লিড নিউজে প্রসঙ্গক্রমে জানানো হয়, ঢাকার সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ৬৫ জন নদী দখলবাজের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। অবশ্য নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় দেখা যায়, পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, কর্ণফুলী, সুরমা, পশুর প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ নদনদী বহু লোকের কবলে পড়ে জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও পেশিবাজদের মতো প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানেরা সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নদনদী দখলে লিপ্ত। নদী রক্ষা কমিশন শিগগিরই ‘যাচাই-বাছাই করে’ দখলদারদের নাম প্রকাশ করবে। কমিশনের মতে, ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের মতো বড় বড় শহরের তথ্য পাওয়া গেলে নদী দখলকারীদের সংখ্যা বাড়বে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কমিশন চেয়ারম্যান সব জেলার প্রশাসকদের অনুরোধ করেন যাতে নদী ও খালসহ জলাভূমির বেআইনি দখলদারদের নাম ওই মাসের মধ্যেই পাঠানো হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এ মর্মে একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসন যাতে এই দখলদারদের তালিকা নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে রাখে এবং তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে, এজন্যও কমিশন অনুরোধ করেছে। নদনদী, খাল ও অন্যান্য জলাশয়ের জায়গা দখল করে নির্মিত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অ্যাকশন প্লান তা বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখসহ জানাতেও ডিসিদের বলা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে জানা দরকার, এসব দখলদার ‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য এবং তারা ব্যাংকের ঋণ পাবেন না’ বলেও হাইকোর্টের রায়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় দেখা যায়, দেশের ৪১টি জেলার মধ্যে নদনদীসহ জলাশয়ের বেআইনি দখলদার সর্বাধিক কুমিল্লায়। এরপরই নোয়াখালীর স্থান। কুমিল্লা জেলায় পাঁচ হাজার ৫৮৯ জন দখলবাজ মেঘনা, গোমতী, তিতাস ও ডাকাতিয়া নদীর জায়গা এবং এসব নদীতীরবর্তী ভূমি গ্রাস করেছে। নোয়াখালী জেলায় মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ফেনী নদীর ক্ষেত্রে অনুরূপ দখলদার আছে চার হাজার ৩৮৯ জন। জানা যায়, বরিশালের মতো কোথাও কোথাও বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি নিয়ে এমন জায়গায় স্থাপনা তোলা হয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসন জানায়, দখলদারদের তালিকা পাঠাতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে বলা হয়েছে। নদী কমিশন বলেছে, কোনো কোনো জেলা প্রশাসক দাবি করেছেন, তারা নদী দখলদারদের তালিকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখনো ২৩ জেলার তালিকাই কমিশনের হাতে পৌঁছেনি। ডিসিদের পাঠানো তালিকায় উল্লিখিত ‘প্রত্যেক বেআইনি দখলদারকে উচ্ছেদ করা হবে’ বলে কমিশন জানিয়েছে।
জানা যায়, উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও তহবিল সঙ্কটে দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে পারছেন না ডিসিরা। নদী কমিশন এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাত্র ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল ৬৪ জেলায় নদীগুলো জবরদখলমুক্ত করার জন্য।
আমরা মনে করি, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অবিলম্বে সব জেলায় নদনদী, খালবিলসহ জলাশয় অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করার জন্য জোরালো অভিযান চালানো জরুরি। এ জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা খুবই প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement