১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জাতীয় উদ্যান অপরাধীদের ‘সেফ জোন’

দেশকে নিরাপদ রাখা সরকারের দায়িত্ব

-

গভীর গজারি বনের ভেতর নির্জন স্থানে কখনোবা একাদিক্রমে তিন-চার দিন লাশ পড়ে থাকে। অপহৃত লোকজনকে খুন করে তাদের লাশ ফেলে রাখা হচ্ছে বনের মধ্যে। কোনো কোনো সময় তা গুম করে ফেলা হয়। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে গেলে মানুষের লাশ হয় শিয়াল-শকুনের খাদ্য।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে সুপরিচিত, রাজধানীর অদূরবর্তী গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও পাশের অরণ্যের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে সহযোগী একটি দৈনিক পত্রিকা এ খবর দিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, লাশের জন্য ‘নিরাপদ’ ভেবে দুর্বৃত্তরা এখানে রেখে যাচ্ছে একটির পর একটি লাশ। গত সাত মাসে গাজীপুর সদর, ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান এবং আশপাশের বন থেকে পাওয়া গেছে ১৯টি লাশ।
এ জায়গায় উদ্ধারকৃত লাশের কয়েকটির করুণ কাহিনী বর্ণনা করে পত্রিকাটি জানায়, ‘মাসুদ রানা’ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন কোটিপতির ছেলে ও প্রকৌশলী আবদুল কাইয়ুম। বন্ধুই খুন করে তার চেহারা এসিডে ঝলসিয়ে লাশটি গজারি বনে গুম করে রাখে। বছরখানেক পরিকল্পনার পর তাকে জাতীয় উদ্যানে নিয়ে শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলা হয়েছিল। গরু চরাতে গেলে এক গৃহবধূকে তার নিকটাত্মীয় বনে নিয়ে অজ্ঞান করে রাখে। ১২ ঘণ্টা পর অচেতন এই নারীকে সেখানে গলা ও পেট কেটে হত্যা করেছে পুত্রবধূ ও তার দুই মামা। ঢাকার বাড্ডা থেকে অপহৃত দুই শিশুকে হত্যা করে জাতীয় উদ্যানে ফেলে রেখেছিল খুনিরা। এই কয়েকজনের না হয় পরিচয় মিলেছে; বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে এসব লাশ দাফন করতে হয়।
অপর দিকে, বিগত ক’মাসে এখানে পাওয়া লাশের কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। র্যাব ধরেছে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের। জাতীয় উদ্যান অত্যন্ত নির্জন, যাতায়াতের দিক দিয়ে সুবিধাজনক এবং রাজধানীর কাছে হওয়ায় দুর্বৃত্তরা এই অঞ্চলকে ‘নিরাপদ’ ভাবছে বলে র্যাবের অভিমত। গাজীপুর সদরের ওসি জানান, জাতীয় উদ্যান এলাকা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার দাবি করেছেন, ‘নিরাপত্তার জন্য এলাকাটিতে পুলিশের টহল বাড়ানো ছাড়াও রাতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
গাজীপুরের জাতীয় উদ্যান নৈসর্গিক সৌন্দর্যপূর্ণ তো বটেই, এটা বেড়ানোর জায়গা হিসেবে সারা দেশে সুপরিচিত। এর অদূরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এলাকাটি প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর বলে প্রতিদিন সপরিবারে অনেকে এখানে বেড়াতে ও বনভোজনে আসেন। কিন্তু খুনি, অপহরণকারী ও ছিনতাইকারীদের জন্য এটা যত নিরাপদ হচ্ছে, ততই নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় নারী-পুরুষের জন্য তা নিরাপত্তাহীন ও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে শুধু যে ভ্রমণপিপাসু মানুষের আগমন বন্ধ হবে তা নয়; একই সাথে সরকারের রাজস্ব আয়ও হ্রাস পাবে। সর্বোপরি, দেশের ইমেজ হবে ক্ষুণœ।
আমরা মনে করি, শুধু জাতীয় উদ্যান বা গাজীপুরের অরণ্য নয়, সর্বদাই গোটা দেশের সব জনপদের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের একটি বড় দায়িত্ব। ভাওয়ালের অরণ্য বা উদ্যানে লাশ পাওয়ার ঘটনা সারা দেশে ক্রমবর্ধমান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের একটি প্রতিফলন। প্রশাসনের এখনই এ দিকে নজর দেয়া জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement