২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রফতানি

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের অবসান ঘটান

-

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের জনজীবনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে দু’টি খবর। একটি বহুপ্রতীক্ষিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়ম বা ‘বালিশ কাহিনী’ এবং আরেকটি, দেশজুড়ে কৃষকদের পাকা ধানে আগুন দেয়া।
প্রথমটি দেখিয়েছে, দেশে দুর্নীতিবাজরা কত বেশি সাহসী হয়ে উঠেছে এবং দুর্নীতির কালো থাবা কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। আর দ্বিতীয় খবরটি সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আমরা কতটা দায়িত্বহীন জাতি। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের খাবারের সংস্থান করে, যারা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী; সেই কৃষকদের প্রতি আমরা কতটা উদাসীন, কত বেশি অবহেলাপ্রবণ।
একজন কৃষক তার সমস্ত শ্রম ও মেধা প্রয়োগ করে ফসল ফলান। সেই ফসল পেকে ওঠার পর সেটি সানন্দে ঘরে তোলার কথা। কিন্তু এর পরিবর্তে কৃষক যখন তার ফসল ক্ষেতেই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না কতটা মর্মজ্বালা, কতটা বঞ্চনাবোধে আক্রান্ত হলে তিনি এ কাজ করতে পারেন।
দেশে এখন বোরো ধানের ভরা মওসুম। এখন গ্রামে গ্রামে কৃষকেরা নতুন ধান বিক্রি করে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করবেন, পুরনো ধারদেনা শোধ করবেন; কিন্তু এ বছর তা সম্ভব হলো না। কারণ, বাজারে ধানের দাম নেই। যে দাম আছে তাতে লাভ হওয়া দূরে থাক, উৎপাদন খরচও ওঠে না। প্রতি বিঘা জমিতে দান উৎপাদনের ব্যয়ের তুলনায় স্থানভেদে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।
ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তারা পালন করতে চেয়েছেন কৃষকের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়ে। দাম ধরা হয়েছে মণপ্রতি ১০৪০ টাকা। কিন্তু সেই ধান কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকার কিনছে না। সরকারের চাল কেনার ব্যবস্থা বোরোর এই ভরা মওসুমেও পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। ধান কিনছেন চালকল মালিকেরা এবং তারা নানা অজুহাতে কৃষককে সরকারি দরে দাম শোধ করছেন না। অথচ তারা সরকারের কাছে চাল বিক্রি করছেন বেশি দামে। আমরা জানি, চালকলের যারা মালিক তাদের মধ্যে দেড় শ’ জনের মতো হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য। এই মালিকেরা প্রতি মণ ধান কেনা বাবদ কৃষককে দিচ্ছেন ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা মাত্র। অর্থাৎ মিলারদের সুবিধা দেয়ার একটা গোপন ছক সক্রিয় রয়েছে। সেই গোপন ছক বজায় রেখে যত ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন, কৃষকের তাতে উপকার হবে না।
দেশজুড়ে কৃষকদের বিক্ষোভ ও হতাশার কারণে পাকা ধানে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনার পর এখন অর্থমন্ত্রী বলছেন, কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার চাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ করবে। শুধু তাই নয়, কৃষক বাঁচাতে প্রয়োজনে সরকার ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রফতানি করবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
কৃষি আমাদের প্রধান চালিকা শক্তি আর কৃষক আমাদের প্রাণশক্তিÑ এসব মুখরোচক বাণী চয়ন করে অর্থমন্ত্রী বলেন, চাল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না; তবে ‘সীমিত’ করা হবে।
ধানের ন্যায্য দাম কৃষকপর্যায়ে না পাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চলতি বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু এখন চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও কম। এ কারণে ধানের দাম নিয়ে ‘কিছু’ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কম থাকার কারণে ধানের দামে কেন সমস্যা হচ্ছে, মন্ত্রী তা স্পষ্ট করেননি। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হলো, মিলারদের জন্য যে গোপন ছক সাজিয়ে রাখা হয়েছে, তার অবসান ঘটানো হোক সর্বাগ্রে। মধ্যস্বত্বভোগী, ফড়িয়া, চাতাল মালিক, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও দালালদের কারণে কৃষকেরা সরকার ঘোষিত দামে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। ওদের দৌরাত্ম্যের অবসান ঘটানো হোক। সারা দেশে সর্বত্র একযোগে ১০৪০ টাকা দরে কৃষকের কাছ থেকে সরকার সরাসরি ধান কিনলে ধানের ন্যায্য দাম আপনা-আপনিই নিশ্চিত হবে।
মনে রাখতে হবে, এ দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪২.৭ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। আর কৃষি থেকে জিডিপিতে ১৪.৭৯ ভাগ আয় যোগ হয়। অথচ বর্তমান সরকার বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ রেখেছে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। গত বছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬.১০ ভাগ। এ বছর বরাদ্দ কমিয়ে ৫.৬৫ ভাগ করা হয়েছে। ফলে কৃষক ও কৃষিপণ্যের অবস্থা ভালো হবে কিভাবে?


আরো সংবাদ



premium cement
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি : মিশা সভাপতি, ডিপজল সম্পাদক ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল