২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঋণখেলাপিদের জন্য সুবিধা

ভালো ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিন

-

খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণ করতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হলো। এ সুবিধা পাবেন সব খেলাপি। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন পরবর্তী ১০ বছর। নতুন সুবিধায় খেলাপিরা বেশি লাভবান হবেন। সাময়িক সময়ের জন্য সমাধান বলে মনে হলেও এটি ভবিষ্যতে ব্যাংক খাতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। পক্ষান্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরেকটি সার্কুলার দিয়ে ভালো ঋণগ্রহীতাদের ঋণের মোট সুদের ওপর ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়ার যে প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে, তা খুবই সামান্য। আর ব্যাংক ঋণের এক অঙ্কের সুদ হারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি গত ১০ মাসে। বরং উল্টো গত দু-তিন মাসে সুদের হার বেড়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। এ জন্য যারা ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছেন, তাদের জন্য এক অঙ্কের সুদ হারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা অতি জরুরি। নিয়মিত গ্রাহকেরা নিজেদের অনুকূলে নেয়া ব্যাংক ঋণ ১৩ বা ১৪ এমনকি ১৫ শতাংশ সুদে পরিশোধ করছেন। অথচ ঋণখেলাপিরা মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেলেন, যা প্রকৃত ব্যবসায়ী বা শিল্প উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে বলে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঋণখেলাপিরা অর্থ পরিশোধে সময়ও পাচ্ছেন এবং ঋণের সুদও কম দিতে হচ্ছে। আর যারা নিয়মিত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করে আসছেন তাদের ব্যাংকের সুদও বেশি দিতে হচ্ছে, সুবিধাও পাবেন কম। এতে ব্যাংকের অর্থ সময়মতো পরিশোধ করার চেয়ে আটকে রাখার প্রবণতা বাড়তে পারে। আর ভালো ঋণগ্রহীতাদের দুই-তিন বছরে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এটা কোনোভাবেই ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং ভালো গ্রহীতাদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে ব্যবসাবাণিজ্য চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক খাতেও স্থিতিশীলতা ফিরে আসত।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিয়ে মন্দ ঋণ কমানো যাবে না। বরং আরো বাড়বে। নিয়মিত করে ফের খেলাপিরা ঋণ নেবেন। যারা অতীতে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি তারা নতুন ঋণ নিয়ে পরিশোধ করবেন, এমন ধারণা যুক্তির ধোপে খুব একটা টেকে না। তাহলে ভালো ব্যবসায়ীদের অপরাধ কী?
আমরা মনে করি, যারা ঋণখেলাপি তারা ভবিষ্যতে সুবোধ বালকের মতো ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন, এটি আশা করার কারণ নেই। সুবিধা পাওয়ার পর তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এক-দুই বছরের মধ্যে তাদের কোনো ঋণ দেয়া যাবে না। কিস্তি ঠিকমতো পরিশোধ করছে কি না তা নজরদারিতে আনতে হবে। কেননা তারা পুরনো খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার পর আবার নতুন করে ঋণ নিচ্ছে কি না সেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন।
সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসাবাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে সবার আগে নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধকারীদের সুদের রেয়াত দেয়া উচিত। তাদের বিশেষ কর সুবিধা দেয়ার পদক্ষেপ সরকার নেবে বলে আশা করি। দেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ছে। বিনিয়োগ আরো বাড়াতে প্রয়োজন কম সুদের ব্যাংক ঋণ। সুদহার কমলে বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, তেমনি ঋণখেলাপি হওয়ার সংখ্যাও কমে আসবে। আর উচ্চ সুদহারের কারণে অনেকে খেলাপিতে পরিণত হন। এটিও বিবেচনায় নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement