১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে হরিলুট

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই

-

‘দুই কোটি টাকার বালিশ’ শিরোনামে সহযোগী একটি দৈনিকে খবর প্রকাশ হয়েছে। এই খরচের রেকর্ড গিনেস বুকে স্থান পেতে পারে। আশা করা যায়, এই রেকর্ড কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। বাংলাদেশ নিয়ে সাবেক আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের একটি উক্তি খুব প্রচলিত ছিল। দুর্নীতির মহা উৎসবের দেশ হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নাম দিয়েছিলেন। এখন খুব গর্ব করে বলা হয়, বাংলাদেশ সেই অপবাদ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে যে দুর্নীতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ধারণা করা যাচ্ছে, দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নতুন কোনো পরিচিতি অর্জন করতে যাচ্ছে।
এই খবরের প্রাথমিক উৎস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হলেও সংবাদমাধ্যম, সেটা যাচাই করে প্রকাশ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক পল্লীর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া ৯টি ভবনের ৯৬৬টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে একটি ২০ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা ও ভবনে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ টাকা। পত্রিকার খবর থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিটি বালিশ কেনায় খরচ পড়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। প্রতিটি বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ হয়েছে ৭৬০ টাকা। প্রতিটি খাট কেনায় খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। ওঠাতে খরচ লেগেছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা। প্রতিটি বৈদ্যুতিক চুলা কেনার খরচ পড়েছে সাত হাজার ৭৪৭ টাকা। প্রতিটি ওঠাতে খরচ হয়েছে ছয় হাজার ৬৫০ টাকা। প্রতিটি বৈদ্যুতিক কেটলি কেনার খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার ৩১৩ টাকা। ওঠাতে লেগেছে দুই হাজার ৯৪৫ টাকা। পত্রিকায় আসবাবপত্র কেনা ও তা ফ্ল্যাটে ওঠানোর ব্যয়ের বিশাল ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। যে কেউ ব্যয়ের এমন আকাশ-পাতাল চিত্র দেখে হোঁচট খাওয়ারই কথা। দিব্যচোখে দেখে এই খরচের তালিকা যারা পাস করিয়েছেন, তাদের কোনোভাবে সৎ ও দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে ভাবার সুযোগ থাকছে না। এটি সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির সামান্য অংশ কি না তা আমাদের জানা নেই। পারমাণবিক প্রকল্পের মূল সংযুক্তি রাশিয়ার সাথে। তদারকির জন্য ডেকে আনা হয়েছে প্রতিবেশী ভারতকেও। মূল প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে স্বচ্ছ কোনো হিসাবপত্র জাতির সামনে নেই। এ প্রকল্পের অর্থ খরচ নিয়ে প্রশ্ন করার সাহসও কেউ দেখাচ্ছে না। এ প্রকল্পে নিযুক্ত বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের বেতন ও সুযোগ সুবিধার চিত্রও পত্রিকাটি তুলে ধরেছে। প্রকল্প পরিচালকের মাসিক বেতন চার লাখ ৯৬ হাজার টাকা। প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পাবেন আরো দুই লাখ টাকা। তার গাড়ি চালকের বেতন ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৭০৮ টাকা। রাঁধুনী ও মালীর বেতন ৬৩ হাজার ৭০৮ টাকা। প্রকল্পের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের বেশ কয়েক গুণ বেশি।
রূপপুরের পরমাণু উন্নয়ন প্রকল্পটি এক লাখ ১৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। এ অবস্থায় এর সামান্য কেনাকাটায় যে দুর্নীতির চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা অতীতের যেকোনো দুর্নীতির চেয়ে বড়। মনে হতে পারে, একটি উন্নয়ন প্রকল্পকে সামনে রাখা হয়েছে কিছু মানুষকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। একটি খাট ফ্ল্যাটে ওঠানোর জন্য ব্যয় দেখানো হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার টাকা; যেন জবাবদিহিতাহীন এক হরিলুট চলছে। পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প একটি বিতর্কিত ইস্যু। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এর পরও সরকারের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খুব আগ্রহ। আমরা মনে করি, পুরো প্রকল্পটির ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনা দরকার। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement
নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইস্ফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’

সকল