২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মৃত্যু পরোয়ানা কেনে সিলেটের তরুণেরা

বৈধ উপায় বের করতে হবে

-

আমাদের দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকার একটি। এখানে আছে কর্মসংস্থানের চরম অভাব। এর ফলে দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করে বেঁচে থাকার উপায় খোঁজে বিপুল বাংলাদেশী। কিন্তু সুষ্ঠুভাবে তাদের বিদেশে পাঠিয়ে কর্মসংস্থান কিংবা স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ায় আছে সরকারের চরম ব্যর্থতা। ফলে বিদেশে গিয়ে কাজ করে খেতে আগ্রহী তরুণেরা সহজে শিকার হয় দালালদের নানা প্রতারণার। আর এ ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয় সিলেটের তরুণেরাই সবচেয়ে বেশি হারে। সম্প্রতি সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে সে সত্যেরই প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়।
খবরটিতে বলা হয়Ñ ইউরোপে যেতে আমাদের জন্য বৈধ উপায় সঙ্কুচিত। দালাল থেকে ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ কেনে সিলেটের তরুণেরা। কয়েক বছর ধরে ভূমধ্যসাগর হয়ে বিপজ্জনক পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করছে প্রধানত সেসব দেশের মানুষ, যাদের দেশ যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তো সে ধরনের অবস্থায় নেই, তাহলে কেন এ দেশের মানুষ এত ঝুঁকি নিচ্ছে, সে প্রশ্ন অনেকের।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার দৃষ্টিতে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ সেই ঝুঁকিপূর্ণ পথেই নিয়মিত ইউরোপে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে বিপুল বাংলাদেশী, যাদের বেশির ভাগই সিলেট অঞ্চলের। দালালদের হাত ধরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দুর্গম পথে পা বাড়ান এরা। জানা গেছে, গত এক বছরে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে নৌকাডুবিতে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের শতাধিক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত ৯ মে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবে যাওয়ায় মারা গেছেন কমপক্ষে ৩৭ বাংলাদেশী। এর মধ্যে ২০ জনই সিলেটের। নিখোঁজ রয়েছেন আরো কয়েকজন।
ইউরোপে যেতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ পথ বেছে নেয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলেছেন, ইউরোপের দেশগুলো, বিশেষ করে ব্রিটেনে যাওয়ার নিয়মকানুনে অতিরিক্ত কড়াকড়ি, দালালদের প্রলোভন, অভিবাসী আইন সম্পর্কে ভুল ধারণা, দেশে কর্মসংস্থানের অভাব, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, চাকরি পেলেও চাহিদামতো বেতন না পাওয়াÑ এসব নানা কারণে জীবনের ঝুঁকি নিতে পিছপা হচ্ছেন না অনেকে।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশে বিদেশী নানা ধরনের কর্মী পাঠানোসহ ছাত্রছাত্রী ও প্রত্যাবাসী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো প্রধানত দালালনির্ভর রয়েছে। যেখানে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে হাজারো ধরনের প্রতারণার উপায়। সরকার এসব বিশৃঙ্খলা দূর করে বিদেশে বাংলাদেশী পাঠানোর ব্যাপারে সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। তাই প্রত্যাবাসীদের দালালদের খপ্পর থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এসব বিশৃঙ্খলা দূর করে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা কার্যকর করা। আশা করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলেরা এবার অন্তত এ ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা পালন করবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement