২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
  সরকারি বাসা নিয়ে অনিয়মের শেষ নেই

অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে

-

২৮ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি দফতরে নানান দায়িত্ব পালন করে আসছেন একজন কর্মকর্তা। এখন তিনি অতিরিক্ত সচিব। সরকারি বাসা পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন কয়েক বছর আগে। এ ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের সাথে। ‘শিগগির বাসা পাবেন’Ñ এমন আশ্বাসও পেয়েছেন উঁচুপর্যায় থেকে। কিন্তু এভাবেই বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে। এ দুর্ভোগ শুধু তার নয়; এমন ভুক্তভোগী অসংখ্য। এ বিষয়ে একটি সহযোগী দৈনিক বিস্তারিত জানিয়েছে।
আলোচ্য প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুগ্ম সচিবসহ ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা দীর্ঘ দিনের চেষ্টা সত্ত্বেও সরকারি বাসা বরাদ্দ পাননি। এ দিকে, লাখ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজধানীতে চাকরি করলেও এ নগরীতে তাদের নেই আবাসনসুবিধা। লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েও আজ পর্যন্ত অর্ধলক্ষ কর্মকর্তা বাসা পাননি। অপর দিকে, একাধিক সরকারি বাসা ব্যবহার করছেনÑ এমন কর্মকর্তা ও কর্মচারীও আছেন। অপেক্ষাকৃত ভালো বাসার সন্ধান পেলেই বাসা পাল্টাতে পারছেন, এমন ‘সৌভাগ্যবান’ও রয়েছেন। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অফিসার্স কোয়ার্টারে বাস করা সত্ত্বেও এখন সুপিরিয়র টাইপ বাসায় উঠতে চাচ্ছেন। অন্য দিকে, কোনো কোনো কর্মকর্তা বরাদ্দ পেয়েও বাসায় উঠতে পারছেন না। কারণ, বরাদ্দ পাওয়ার দুই বছর পরও সে বাসা খালি হয়নি। এ অবস্থায় সুদূর উত্তরার ভাড়াবাসা থেকে অফিসে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দেখা গেছে, সরকারি বাসা পেতে অনেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের টাকা দিয়েছেন; তবুও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে ‘রাজনৈতিক যোগাযোগ’ থাকার সুবাদে আবেদনের সাথে সাথে বাসা পাওয়ার নজিরও আছে। কেউ কেউ অবসরে গেলেও সরকারি বাসা ছেড়ে যান না। আবার কেউ মারা যাওয়ার পর আত্মীয়-পরিজন তার বাসায় বাস করছেন। কর্তৃপক্ষ এসব জানলেও নেয়া হয় না কোনো পদক্ষেপ।
আর আবাসন পরিদফতরের বক্তব্য, চাহিদার তুলনায় সরকারি বাসা খুব কম। তাই যিনি যত ‘শক্ত লবিং’ করতে পারেন, তিনি তত দ্রুত বাসা পেয়ে যান। এ অবস্থায় মন্ত্রী-এমপি কিংবা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পছন্দের ব্যক্তিকে বাসা বরাদ্দ দিতে সুপারিশ করে থাকেন। তবুও অনেককে বাসা দেয়া সম্ভব হয় না। কোনো বাসা খালি হলেই মন্ত্রী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশসহ এ জন্য আবেদন করেন অনেকেই। আবার দেখা যায়, একই বাসার জন্য একজন মন্ত্রী সুপরিশ করছেন তিন-চারজনের আবেদনপত্রে!
এ দিকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, ঢাকায় চাকরি করে আবাসনসুবিধা পাওয়া না গেলে জীবনযাপন করা দুঃসাধ্য। বেতনের বেশির ভাগই ব্যয় করতে হয় বাসা ভাড়ায়। এতে অনেকে সংসার চালাতে আয়ের ভিন্ন পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।
এখন দেশে সরকারি চাকুরে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ২৯৮ জন। অপর দিকে, রাজধানীতে আবাসন সুবিধার বাইরে রয়ে গেছেন ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের যে ভাতা দেয়া হয়, তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেছেন, ‘নতুন প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে কর্মকর্তাদের অনেকেরই আবাসন সঙ্কট দূর হবে। বাসা বরাদ্দে স্বচ্ছতার জন্য কার্যক্রমে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হবে।’
সরকারি বাসা বরাদ্দের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা বিরাজ করছে। অবিলম্বে এসব দূর করার পদক্ষেপ নিয়ে মন্ত্রী তার সাম্প্রতিক অঙ্গীকার কার্যকর করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

 


আরো সংবাদ



premium cement