২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ

অপরাধীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে

-

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করায় অনেক ট্রেনযাত্রী মর্মান্তিকভাবে আহত হচ্ছেন। অনেকে চোখসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারাচ্ছেন। পাথর নিক্ষেপ করা হয় এমন ৮০টি স্পটের তালিকা তৈরি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তারা কিছু ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে; কিন্তু তাতে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা কমছে না। চলন্ত ট্রেনের যাত্রীর ওপর এমনভাবে পাথর আঘাত হানে যখন তারা সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত থাকেন। অন্য দিকে যারা এই দুষ্কর্ম করে তারা নিতান্ত আনন্দের ছলে পাথর নিক্ষেপ করে থাকে। সাধারণত শিশু-কিশোররা খেলার ছলে এই কাজ করে থাকে। কিন্তু তার খেলার ফলে অন্য একজনের প্রাণ নিয়ে টানাটানি হচ্ছে সেটি তার ধারণার মধ্যে থাকে না। এ ধরনের নিষ্ঠুর খেলার অবশ্যই অবসান হওয়া দরকার।
দেশে দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ২০ জেলার ওপর দিয়ে চলাচলের সময় ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা বেশি ঘটে। রেলওয়ে পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, পাথর নিক্ষেপের ৮০ শতাংশ ঘটনা ঘটায় শিশু-কিশোররা। সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, গত পাঁচ বছরে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার কারণে দুই হাজার দরজা-জানালা ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। গত এক বছরে ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক যাত্রী। ৫ মে এ ধরনের একটি পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় চার বছরের এক শিশু ও তার মা আহত হয়েছেন। শিশুটি গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় দু’জনের প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটেছে। এর একজন রেলের টিকিট চেকার ও অন্যজন প্রকৌশলী।
চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের ওপর পাথর নিক্ষেপের ঘটনা মর্মান্তিক হলেও কোনোভাবেই তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষ পাথর ছুড়ে মারা হয় এমন ২০টি জেলার ৮০টি স্পট চিহ্নিত করেছে। ওই সব স্পটে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার ও মাতব্বরদের সাথে বসে সচেতনতা তৈরির কর্মসূচিও নেয়া হয়। এর পরও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের আরো প্রচেষ্টা নেয়া উচিত। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের লক্ষ্য করে সচেতনতামূলক কর্মসূচি এতে কাজে আসতে পারে। এই লক্ষ্যে স্থানীয় স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা তৈরির জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে রেল কর্তৃপক্ষ। রেল লাইনের পাশে যাদের বাড়িঘর রয়েছে এসব ঘরের অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। তারা নিজেরা যাতে শিশু-কিশোর সন্তানদের ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ভয়াবহ দিকটি তুলে ধরতে পারেন।
ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। পাথর নিক্ষেপের ফলে কারো মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। পাথর ছোড়ার জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব আইন প্রয়োগ অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছে। কারণ অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। নতুন করে উদ্যোগী হতে হবে। অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে তাদের জোর দিতে হবে। এ জন্য দুটো কাজ করা যায়। কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত স্পটে তাদের নিজস্ব জনবল নিয়োগ করতে পারে, যারা পাথর নিক্ষেপকারীদের শনাক্ত করবে। আবার রেল পুলিশকেও আরো সতর্ক অবস্থায় রাখা যায়। পাথর নিক্ষেপের ঘটনা টের পেলে তারা যাতে বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করতে পারে, যাতে পাথর নিক্ষেপকারীরা পাল্টা আক্রান্ত হওয়ার ভয় পেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল