২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নের দায় কি শিক্ষার্থীর?

‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ নয়

-

বিশেষ করে গত কয়েক বছর দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে প্রায় ক্ষেত্রেই ভুল থেকে যায়। নতুন সিলেবাসের পরীক্ষার্থীদের দেয়া হয় পুরনো সিলেবাসের প্রশ্ন। অনেক সময় পরীক্ষার হলে প্রথমে ভুল প্রশ্নপত্র দিয়ে কিছুক্ষণ পরে তা ‘সংশোধন’ করে নেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে যা-ই করুক না কেন, কার্যত শিক্ষার্থীদেরকেই মাশুল দিতে হয়। অথচ এ জন্য তারা দায়ী নয় মোটেও।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও বণ্টনের বেলায় ভুল হলে এর জন্য দায়ী স্বাভাবিকভাবেই তারা, যারা এ ব্যাপারে নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত। যেমনÑ বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রেস এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড। এবার গত ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিনেই বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় খোদ রাজধানীর দনিয়া কলেজের পাঁচটি রুমে ভুল প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল। নতুন সিলেবাসের পরীক্ষার্থীরা শুরুতে এমসিকিউ অংশের প্রশ্ন পেয়ে উত্তর লিখতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে তারা বুঝতে পারে, তাদের যে প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে এতে এমসিকিউ আছে ৪০টি। অথচ থাকার কথা ৩০টি। এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে দেখা যায়, প্রশ্নগুলো ২০১৬ সালের সিলেবাস অনুসারে পুরনো শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত। তখন এমসিকিউ থাকত ৪০টি এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ছিল ৬০ মার্কস। এখন সিলেবাসে এমসিকিউ কমে হয়েছে ৩০টি এবং লিখিত পরীক্ষার নির্ধারিত মার্কস ৭০। এ অবস্থায়, ১ এপ্রিল ২৫ মিনিট পরে প্রশ্ন পরিবর্তন করে নতুন সিলেবাস মোতাবেক প্রশ্ন নিতে হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সবার মনে প্রশ্ন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায়ও এত বড় ভুল কেন হচ্ছে এবং যারা এ জন্য আসলেই দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? কর্তৃপক্ষ আগেই যদি এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যেত, তাহলে বারবার এ ধরনের বিরাট ভুল ঘটতে পারত না। দনিয়া কলেজের একজন শিক্ষক বলেছেন, আমাদের ভুল হয়নি। যে প্যাকেট খুলে প্রশ্ন দেয়া হয়েছে, সেটিতে লেখা ছিল ‘২০১৯ সালের সিলেবাস’। কিন্তু প্যাকেটের মধ্যে ছিল ২০১৬ সালের প্রশ্ন।’ একজন ভুক্তভোগী অভিভাবক দুঃখের সাথে জানালেন, ‘এক প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া শুরু করার পর তা বদলে যাওয়ায় আমার সন্তানের মানসিক বিপর্যয় ঘটেছে। ফলে সে লিখিত পরীক্ষা ভালোভাবে দিতে পারেনি। অথচ সে এ জন্য দায়ী নয়। তাকে কেন ভুল প্রশ্নের দায় নিতে হবে?’ ১ এপ্রিল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং মানিকগঞ্জের একটি সরকারি কলেজেও নতুন পরীক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্র। পরে জানতে পেরে বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের খাতা আলাদা রেখেছে। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের ৯টি কেন্দ্রে পুরনো সিলেবাস দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, কুমিল্লা, গাইবান্ধা, পঞ্চগড় প্রভৃতি জেলার বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে পুরনো সিলেবাসের প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এই ভুল ধরা পড়ার পরও প্রশ্ন বদলানো হয়নি। অর্থাৎ, পড়ালেখা করা হয়েছে নতুন সিলেবাস অনুযায়ী; কিন্তু পরীক্ষার মূল্যায়ন হচ্ছে আগের সিলেবাস মোতাবেক।
এ সমস্যার প্রতিকারে কেউ কেউ প্রস্তাব করেছেন ভিন্ন রঙের কাগজে পুরনো সিলেবাসের প্রশ্ন করার জন্য। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, যেসব পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে পুরনো সিলেবাসে, তাদের মূল্যায়ন হবে পৃথকভাবে। এদের অন্যান্য পরীক্ষা কেমন হয়েছে, তা বিবেচনা করা হবে এ ক্ষেত্রে। তাদের শুরুতেই দেখে নেয়া উচিত সঠিক প্রশ্নপত্র পেয়েছে কি না।
পাবলিক পরীক্ষাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এসব পরীক্ষায় নয়, কোনো পরীক্ষাতেই ভুল প্রশ্নপত্র দেয়ার বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। আর কর্তৃপক্ষ প্রথমেই সচেতন হলে বারবার এমন ঘটনা ঘটত না। সবচেয়ে বড় কথা, প্রশ্নপত্র বিলি-বণ্টন করা যাদের দায়িত্ব, তারা এর দায় কোনো মতেই এড়াতে পারেন না। ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ না চাপিয়ে বরং সবাই সততার সাথে দায়িত্ব পালন করা উচিত। অন্যথায়, শিক্ষার্থীরা এবং তাদের অভিভাবকসহ বাস্তবে পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন রঙের প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রস্তাবটি বিশেষভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement