২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
পথে পথে প্রতিবন্ধীদের সামনে বাধা

অমানবিক আচরণ বন্ধ করুন

-

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের একটি বড় অংশই প্রতিবন্ধী। তাদের পর্যাপ্ত অধিকার ও সুযোগ- সুবিধা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। তবুও এ দেশে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যার কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এরই নমুনা হিসেবে একটি জাতীয় দৈনিক ‘প্রতিবন্ধীবান্ধব’ হিসেবে তৈরি করা পথে প্রতিবন্ধক সৃষ্টির ওপর সচিত্র প্রতিবেদন ছেপেছে।
দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীর মিরপুর সড়কের ফুটপাথ প্রতিবন্ধীদের অবাধ চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছিল; কিন্তু এখন সেটি প্রতিবন্ধীরা ব্যবহার করতে পারছেন না। এর কারণ, ফুটপাথের শুরুতেই দেয়া হয়েছে লোহার ব্যারিকেড। পুলিশ যদিও ‘মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য’ রোধ করার জন্য এটা করেছে, বাস্তবে এই ব্যারিকেড অতিক্রম করে ফুটপাথটিতে ঢোকা প্রতিবন্ধীদের পক্ষে অসম্ভব।
এখানেই শেষ নয় অমানবিক আচরণের। নগরজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের মধ্যে গুরুতর সমন্বয়হীনতাও এর মধ্য দিয়ে প্রকট হয়ে উঠেছে। তদুপরি, পুলিশ কর্তৃপক্ষ ফুটপাথে এহেন প্রতিবন্ধক দেয়ার পক্ষে ‘যুক্তি’ দেখিয়েছে। এ দিকে প্রতিবন্ধীরা হুইল চেয়ার কিংবা সাদা ছড়ি সহযোগে ফুটপাথ দিয়ে চলতে গিয়ে পড়ছেন মারাত্মক বিড়ম্বনায়। এ ধরনের প্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে মহানগরীর ফুটপাথে বসানো হয়েছে লাল-হলুদ টাইলস। ফুটপাথের মাঝের হলুদ টাইলসের কোনোটায় লম্বা উঁচু দাগ; আবার কোনোটাতে গোল গোল উঁচু দাগ। এই লম্বা আকৃতির নকশা থাকায় প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার সহজে চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদেরও লাঠি নিয়ে চলাফেরা করা সহজ হয়। আর গোল গোল নকশায় পা রাখলেই বুঝতে পারেন, ‘এখানে নামতে হবে’। তা ছাড়া হুইল চেয়ার ব্যবহারের জন্য ফুটপাথের একাংশ ঢালু রাখা হয়েছে; কিন্তু লোহার খুঁটির ব্যারিকেডের দরুন এসব সুবিধার একটিও বাস্তবে প্রতিবন্ধীদের কাজে আসে না। ‘মোটরসাইকেলের যথেচ্ছ চলাচল’ বন্ধ করার জন্য ফুটপাথে কিছু দূর পরপরই বসানো হয়েছে লোহার তৈরি খুঁটি। কোথাও বা রয়েছে বাঁশ ও সিমেন্টের খুঁটি। এর বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেয়া যাদের কর্তব্য, তারা এ দিকে কানই দেন না।
বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘সার্বিক অবস্থা দেখে বলতে হয়, দৈহিক প্রতিবন্ধীরা যে মানুষ, তা মনে করা হয় না। ফুটপাথে এভাবে বিঘœ সৃষ্টি করা নাগরিক অধিকার হরণের নামান্তর।’ প্রতিবন্ধী একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে প্রতিবন্ধীবান্ধব ফুটপাথ তৈরি করা হয়েছিল। এখন সেটি অবরুদ্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ত সড়ক দিয়ে হুইল চেয়ারে যাতায়াত করতে হয়। নারী প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নিয়োজিত একটি সংস্থার প্রধান বলেন, ‘মোটরসাইকেল ফুটপাথে চালালে সে জন্য শাস্তি দেয়া যায়; কিন্তু ফুটপাথে খুঁটি বসানো হবে কেন? এ বিষয়ে বারবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’ একজন নগর পরিকল্পনাবিদের মতে, ফুটপাথে প্রতিবন্ধক দেয়ার অর্থ, মাথাব্যথা হলে মাথাটাই কেটে ফেলা। জেল-জরিমানা-লাইসেন্স বাতিলের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য রোধ করা যায়। একজন মানবাধিকার সংগঠকের মতে, ফুটপাথের খুঁটি বৃদ্ধ ও বয়স্কদের জন্যও সমস্যার কারণ। কোনো সংস্থা কারো অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে পারে না।
আমরা আশা করি, বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের নির্বিঘœ চলাচলের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতিসত্বর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ জন্য প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন মহলের বাস্তবধর্মী পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement