১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রতিদিন কমপক্ষে একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

বিচারহীনতার এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে

-

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক অপহরণ করে গুম করার বিতর্কিত এই অপরাধ কর্মটি বাংলাদেশে চলছে অবাধে এবং সময়ের সাথে এর তীব্রতা বাড়ছে। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকের খবরে জানা গেল, প্রতিদিন দেশে কমপক্ষে একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এসব লোক হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন পুলিশের হেফাজতে অথবা কথিত বন্দুকযুদ্ধে। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এ তথ্য তুলে ধরে।
প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১২ জন গুম হয়েছেন এবং ৯১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। এর মধ্যে মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২ জন এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যে ৯১ জন বিচরবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫২ জন নিহত হয়েছেন পুলিশের হাতে, ১৯ জন র্যাবের হাতে, ১১ জন বর্ডার গার্ডের হাতে এবং বাকিরা হত্যার শিকার হয়েছেন গোয়েন্দা, কোস্টগার্ড ও সেনা কমান্ডদের হাতে। অনেকেই হত্যার শিকার হয়েছেন ২০১৮ সালের মে মাসে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এবং চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৫১ জন। বর্তমান বছরের প্রথম তিন মাসে গুম হয়েছেন কমপক্ষে ১২ জন। অন্য ১১ জন মারা গেছেন কারাগারে। গুম হওয়াদের মধ্যে দুইজনের লাশ পাওয়া গেছে। পাঁচজনকে পাওয়া যায় পুলিশের হাতে আটকাবস্থায়, একজন নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন এবং কমপক্ষে চারজনের অবস্থান এখনো জানা যায়নি।
মানবাধিকার কর্মীদের পর্যবেক্ষণ মতে, দেশে এ ধরনের অপরাধে লিপ্তদের দণ্ডমুক্তির সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে। মানবাধিকার সক্রিয়বাদী নূর খান গণমাধ্যম প্রতিনিধিকে বলেছেনÑ ‘অন্যান্য ফ্যাসিবাদী শাসকদের মতো সরকার সার্বিক উপায়ে চেষ্টা করে চলেছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করতে। আমি মনে করি, অধিকারের প্রতিবেদনের চেয়েও বাস্তবতা আরো উদ্বেগজনক। প্রতিটি নাগরিক তাদের মতামত প্রকাশ নিয়ে শঙ্কিত। আর আমার বিশ্বাস, প্রতিবেদনটিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের যে সংখ্যা অধিকার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে আরো বেশি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক অবশ্য প্রতিবেদনে উল্লিখিত পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়ে তা ঘটছে। তবে প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
আমরা মনে করি, ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সংখ্যা প্রতিবেদনের তুলনায় কম বেশি হতে পারে। তবে আমাদের স্বীকার করতে হবে এসব বিচরবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনাগুলো বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর এর জন্য দায়ী ব্যক্তিরা এক ধরনের দণ্ডমুক্তির সুযোগ ভোগ করছেন। এর মাধ্যমে দেশে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি কায়েম হতে চলেছে। আর এর মাধ্যমে অনেকে রাজনৈতিক হয়রানির শিকারে পরিণত হচ্ছেন। এ ধরনের অপসংস্কৃতি বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার সুযোগকে বারিত করছে। দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এ ধরনের অপসংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করার এটাই চরম সময়। তা করতে ব্যর্থ হলে সমাজ একদিন নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। গতকালের খবর মতে, আমাদের বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, যার প্রমাণ ওয়ার্ল্ড প্রেস কিডস ইনডেক্সে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের সূচকে আমরা এবার আরো চার ধাপ পিছিয়েছি। এসব বাস্তবতা আমাদের উপলব্ধিতে রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement