২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্বাধীন সাংবাদিকতা সূচকে পেছাল বাংলাদেশ

গণমাধ্যমকে শ্বাস নেয়ার সুযোগ দিতে হবে

-

স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্র চর্চার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অনেক দেশেই গণতন্ত্রের ‘প্রকাশ্য জয়যাত্রা’ দেখা যাচ্ছে কিন্তু একই সময়ে স্বাধীন সাংবাদিকতা চাপের মুখে পিছু হটছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা চর্চার ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যাচ্ছে। এখানে চারদিকে গণতন্ত্র চর্চার খই ফুটছে। অন্তত শাসক দলের মুখের ভাষ্যে সেটা দৃশ্যমান। এখানে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ক্রমে অধিকতর চাপের মুখে পড়ছে। অসংখ্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কাজ করছে দেশে। বেশির ভাগ মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে সরকারের গুনগান; অন্যদিকে প্রকৃত অবস্থা উপস্থাপন, প্রকৃত খবর থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত। একইভাবে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে চরম চাপের মুখে পড়ছে সাংবাদিকেরা। অনেক সময় শাসক দলের কাছে অত্যাচর নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন তারা। প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের সূচকে বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ‘পিছু হটা’র চিত্র উঠে এসেছে।
সংস্থাটির গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ চার ধাপ পিছিয়েছে। গত বছর ১৪৬তম স্থানে থাকা বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর ১৫০তম। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে এ সূচক প্রকাশ করে থাকে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার। এ বছর ১৮০টি দেশের ওপর গবেষণা জরিপ চালিয়ে এ সূচক তৈরি করা হয়। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাংবাদিকেরা কঠোর নীতিমালার শিকার হচ্ছেন। ২০১৮ সালের শেষের দিকের নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বিচারে ওয়েবসাইট বন্ধ ও সাংবাদিকদের ওপর দমনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভিত্তিহীন কারণে ১০০ দিনেরও বেশি কারাগারে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। বলা হয় এ ঘটনা সরকারবিরোধীদের দমন করতে বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহারের নজির। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে ক্ষমতাসীনেরা। প্রচারণার অভিযোগে ১৪ বছরের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান নিচের দিকে হলেও বাংলাদেশের চেয়ে সবাই অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। ভারতের অবস্থান ১৪০, পাকিস্তানেরে অবস্থান ১৪২, আফগানিস্তান ১২২, নেপাল ১০৬ ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে ১২৬তম স্থানে। এ অঞ্চলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভুটান ৮০তম স্থানে। তালিকার একেবারে নিচের দেশগুলো হলোÑ উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া, চীন ও ভিয়েতনাম। তালিকার একেবারে উপরের পাঁচটি দেশই ইউরোপের। দেখা যাচ্ছে, উগ্রজাতীয়তাবাদের উত্থান দেখা দিলেও সেখানে সাংবাদিকতা এখনো নিরাপদ রয়েছে। পরপর তিন বছর ধরে সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে নরওয়ে। এরপর যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্থিতিশীল সমাজের জন্য দেশগুলো অনুসরণীয় হতে পারে। গণতন্ত্র চর্চায়ও এদেশগুলো শান্তিপূর্ণ নজির স্থাপন করেছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকদের ওপর ঘৃণা সহিংসতায় পরিণত হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে কয়েকটি অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনকারীরা কিছু ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। ক্ষমতাসীনদের সমর্থক গোষ্ঠী এই আন্দোলকারীদের ওপর যেমন নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে; একইভাবে এসব খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকেরা তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অন্য দিকে, গণমাধ্যমের মালিক ও সম্পাদকেরা হিসাব করে চলছেন। প্রতিনিয়ত তারা সংবাদের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করছেন। তাদের এ ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হচ্ছে যে তারা না কোনোভাবে রোষানলে পড়ে যান। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা এবং আয়ের পথ নির্ঝঞ্ঝাট রাখার জন্য তাদের এমনটি করতে হচ্ছে। এ অবস্থার সাথে গণতন্ত্রের কোনো মিল নেই। ব্যাপারটি ক্ষমতাসীনেরা কোনোভাবে মানতে রাজি নয়। তারা একদিকে নিজেদের শাসনব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক, অন্য দিকে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রিত চলার জন্য চাপ বজায় রাখছেন। এ অবস্থায় গণমাধ্যমের দম আটকে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement