২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ওয়াসার দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি

জনসেবায় আরো সক্রিয় হতে হবে

-

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) রাজাধানীর পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ওয়াসার সেবার মান নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে পানির মান, সেবার মান ও প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ নানা অনিয়ম উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ না হওয়ায় মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তারা জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, ঢাকা ওয়াসার সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ গ্রাহককে।
টিআইবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকা ওয়াসার পানি খেয়ে মানুষ ডায়রিয়া, জন্ডিস, নানা ধরনের চর্মরোগ, টাইফয়েড ও কলেরায় আক্রান্ত হয়। রাজধানীর ডায়রিয়া রোগীদের ৬৩ শতাংশ, জন্ডিস রোগীদের ৩৪ শতাংশ, চর্মরোগীদের ৩৭ শতাংশ, টাইফয়েড রোগীদের ১৯ শতাংশ ও কলেরা রোগীদের ১৩ শতাংশ ওয়াসার পানি ব্যবহারের কারণে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, তার ৫১ শতাংশ অপরিষ্কার আর ৪১ শতাংশ দুর্গন্ধযুক্ত। এই পানি পুনরায় বিশুদ্ধ করতে ফোটাতে হয়, তাতে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস খরচ হচ্ছে। ওয়াসার রয়েছে একটি মাত্র ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। এটিও সক্ষমতার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহার করা হয়। ২০ শতাংশের বেশি গ্রাহক সারা বছর প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প পানি পাচ্ছেন। ৯৪ শতাংশ গ্রাহক গ্রীষ্মকালে পান স্বল্প পানি। ঢাকায় ওয়াসার পানি উৎপাদন ক্ষমতা ২৪০ কোটি লিটার। সে অনুযায়ী পানির ঘাটতি থাকার কথা ১৮ কোটি লিটার। বাস্তবে গ্রাহকেরা যে পরিমাণ ঘাটতির মুখে পড়েন এই হিসাবের সাথে তার মিল নেই। এ ছাড়া ওয়াসার পানিপ্রাপ্তির ন্যায্যতার বিষয়টিও জরিপে উঠে এসেছে। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এলাকাগুলোতে নির্বিঘেœ পানি সরবরাহ করা হলেও বস্তিসহ বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। জরিপে উঠে এসেছে, ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী পানি পাচ্ছেন না। ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ গ্রহাককে মোটর দিয়ে পানি টেনে নিতে হয়। ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ গ্রাহক ওয়াসার সার্বিক সেবা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন।
সেবাদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। বিভিন্ন পদে নিয়োগ, পদায়ন ও বদলিতে অন্যান্য সরকারি বিভাগের মতোই এখানে দুর্নীতি চলে। ক্রয়প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মিটার রিডিংয়ে দুর্নীতি রয়েছে। সেবা নিয়ে গ্রাহকেরা ২০০ টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়েছেন। পানির সংযোগ নিতে ২০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, পয়ঃনালা পরিষ্কার করতে ৩০০ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা, গাড়ির মাধ্যমে পানি পেতে ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, এভাবে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ওয়াসার বিভিন্ন পর্যায়ে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেয়ার নজির পেলেন জরিপকারীরা।
বলা হয় ‘পানির অপর নাম জীবন’। পানি ছাড়া মানুষের একটি দিনও চলে না। সেই অর্থে ওয়াসা শুধু একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান নয়, অনেক বেশি কিছু। টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির দীনতা ফুটে উঠেছে। এর কাজ, রাজধানীর মানুষকে নির্বিঘেœ পানি সরবরাহ করা হলেও চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ দিনের পর দিন চলতে পারে না। গ্রাহকদের সেবার বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণের ব্যাপার মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। টিআইবি এ ব্যাপারে যে ১৩ দফা সুপারিশ দিয়েছে, কর্তৃপক্ষ এগুলোকে আমলে নেয়া উচিত। পানি সরবরাহ নির্বিঘœ করতে প্রতিষ্ঠানটির আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement