২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১২০০ কোটি টাকা গচ্চা

অপচয় কখনো গ্রহণযোগ্য নয়

-

দেশে সরকারের অনেক প্রকল্পই নেয়া হয়, যেগুলো বাস্তবায়নের মুখ দেখে না। আবার তা বাস্তবায়নের কাজ করতে গিয়ে বছরের পর বছর বিলম্বিত করা হয় কিংবা বাস্তবায়ন অর্ধেক পথে থেমে থাকে। যদিও ইতোমধ্যে এর পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়। বিষয়টি একটি জাতির জন্য খুবই দুঃখজনক। কারণ, এতে জাতীয় অর্থনীতির হাজার হাজার টাকা কার্যত গচ্চা যায়।
সম্প্রতি একটি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিক তেমনি একটি প্রকল্পের কথা জানিয়ে গতকাল শীর্ষ সংবাদ প্রকাশ করেছে। খবর মতেÑ খুলনা, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় গ্যাস সরবরাহের জন্য বিগত চারটি সরকার ১২০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু ১৪ বছরেও ওই এলাকায় গ্যাস যায়নি। এখন গ্যাস সরবরাহের প্রকল্পই বাদ দেয়া হয়েছে। সরকার ওই টাকা খরচ করেছে দু’টি প্রকল্পের মাধ্যমে বড় পরিসরে শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে। প্রথমে ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। পরে আরো ৬০০ কোটি টাকার একটি বিতরণ প্রকল্প নেয়া হয়। এই প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকা দিয়ে বিতরণ লাইনের সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখন সরঞ্জামগুলো বিনা ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে। আধাখেঁচড়া প্রকল্পটি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৬ সালে শেষ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সঞ্চালন লাইনের উৎসে এই পাঁচ জেলায় বিতরণের মতো কোনো গ্যাস নেই।
আমরা জানি, সরকারের যেকোনো প্রকল্প শুরু করার আগে তা ব্যাপকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করা অপরিহার্য। এ ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই যথাযথভাবে করা হলে একটি প্রকল্পের এ ধরনের পরিণতি হতো না। আমাদের মনে হয় এই প্রকল্প গ্রহণের সময় এ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ঘাটতি থাকতে পারে।
এ দিকে পেট্রোবাংলার একটি তদন্ত কমিটি গত বছর বলেছে, বিতরণ লাইন নির্মিত হলে কমপক্ষে তিনটি জেলায় গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হতো। এতে কিছুটা হলেও খরচের টাকা উসুল হতো। এখন পুরো টাকাই পানিতে গেছে। এই প্রকল্পভুক্ত পাঁচটি জেলা হচ্ছেÑ কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাট। কিন্তু আপাতত এসব জেলায় গ্যাস সরবরাহের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। প্রশ্ন হচ্ছেÑ তাহলে কেন এসব জেলায় হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই টাকার পুরোটাই গচ্চা দিতে হলো। প্রশ্ন আসেÑ কার স্বার্থে কী উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল?
সঞ্চালন লাইনের কাজ শুরু হয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ছিলেন অধ্যাপক ম. তামিম। তিনি বলেছেন, যখন এ দু’টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তখন সরকার জানত গ্যাস পাওয়া যাবে না। সেটি জেনেও এত বড় প্রকল্প নেয়া উচিত হয়নি। এ প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপিত হয়েছে, বিতরণ সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, কিন্তু গ্যাস যাচ্ছে না। আপাতত যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পগুলো আমাদের আগে নেয়া হয়েছিল। আমরা তখন জোর করে বন্ধ করতে পারতাম। এডিবির ঋণে এ প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। প্রকল্প বন্ধ করা হলে তখন নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিত।’
এ প্রকল্পটি আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণের নানা দুর্বলতার পরিচায়ক হয়েই থাকবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অপচয় রোধ করা যায়, সেজন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। যারা এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement