১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নারীর প্রতি সহিংসতার ব্যাপকতা

বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি দায়ী

-

শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এখন কোনো জায়গায় নিরাপদ নয় নারী। সভ্যতাদর্পী পাশ্চাত্যেও নারী আজ অনিরাপদ। নানাভাবে হচ্ছেন বঞ্চিত ও নিগৃহীত। দেশে দেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও নারীর প্রতি যৌন হয়রানির খবর প্রচারিত হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের মতো প্রতিষ্ঠানে যেখানে দৃশ্যত নারীর প্রতি দেখানো হয় সমতার পরাকাষ্ঠা, সেখানেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার লালসার শিকার হচ্ছেন অনেক নারীকর্মী। সম্প্রতি এই বিশ্বসংস্থার অভ্যন্তরীণ এক জরিপে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করা হয়।
আমাদের দেশে সংবাদপত্রে প্রায় প্রতিদিন ধর্ষণের, তথা নারকীয় পন্থায় নারী নিপীড়নের খবর পাওয়া যায়। ফেনীর সোনাগাজীর নুসরাত জাহান রাফির সাম্প্রতিক সময়ে করুণ মৃত্যুর পর দেশজুড়ে চলছে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। নারীর প্রতি সহিংসতাÑ একটির পর একটি ঘটনা, কোনোটারই যেন রাশ টানা হয় না।
গত বছর ব্র্যাকের এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, গণপরিবহনে চলাচলকারী নারীদের ৯৪ শতাংশ কোনো-না-কোনো সময় মৌখিক, শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। গত পাঁচ বছরে (২০১৪-১৮) ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের অপচেষ্টা এবং ধর্ষণজনিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অন্তত চার হাজার নারী ও শিশু। এ হিসাব দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ভুক্তভোগীদের মধ্যে যাদের বয়স জানা যায়, তাদের ৮৬ শতাংশই শিশু অথবা সদ্যতরুণী। ধর্ষণজনিত হত্যার শিকার নারীরাও প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছেন তরুণী। এ দিকে পুলিশ সদর দফতরের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে ১৯ হাজারের বেশি ধর্ষণের মামলা হয়েছে এ দেশে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হন ২০১ জন নারী। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৪ জন। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হলেন ১৭৩ জন নারী এবং চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে হয়েছেন ২৮ জন। গত বছর যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন আটজন। গত তিন মাসে আত্মহত্যা করেছেন তিনজন।
পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাব নারীর এগিয়ে চলার পথে বিরাট বাধা। সহিংসতা প্রতিরোধের কাজটি বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। এর উৎস পরিবার ও সমাজে বিদ্যমান নারীর প্রতি বৈষম্যের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। মোকাবেলার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নিয়মিত কার্যক্রম প্রয়োজন। সরকারের সামনে বড় ও বহুমাত্রিক এক চ্যালেঞ্জের নাম নারী নির্যাতন। যৌন বা শারীরিক নির্যাতন, হয়রানি, হত্যা-অপহরণ, এসবই নারীকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে ফেলছে। এগুলোর প্রতিরোধ এবং প্রতিকার দু’টিই অপরিহার্য।
সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করা জরুরি। সমাজের মানসিকতা বদলে বিনিয়োগ দরকার। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। রাষ্ট্র, পরিবার ও সমাজে নারীকে ব্যক্তি হিসেবে উপযুক্ত স্বীকৃতি ও সম্মান দিতে হবে। রাষ্ট্রকে এসব বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দ্রুত স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবার অংশগ্রহণের বিকল্প নেই।
যৌন হয়রানি ও সহিংসতার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হচ্ছে। অনেক সময় ওরা রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। রাজনৈতিক ক্ষমতার আশ্রয় নিয়ে কেউ যাতে যৌন বা অন্যবিধ হয়রানি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে আজো পূর্ণ আইন তৈরি করা হয়নি। এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
আমরা মনে করি, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, রাজনৈতিক প্রশ্রয়, পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা, যথার্থ শিক্ষায় তরুণদের শিক্ষিত না করা প্রভৃতি যৌন অপরাধ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ধর্ষণের লাগাম এখনই টেনে না ধরতে পারলে ভবিষ্যতে অসংখ্য নুসরাতের লাশ নিয়ে অসহায়ভাবে কাঁদতে হবে আমাদের।


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

সকল