অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা
- ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় অর্থনীতিতে ব্যাংক খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয় এ খাত ঘিরে। যে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা যত মজবুত, সে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড তত শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারে। আমাদের দেশে কয়েক বছর ধরে এ খাত সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিছক রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়ায় এবং খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক খাতে নগদ অর্থের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থসঙ্কট তীব্র। ফলে নগদ টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপকদের উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। সঙ্কট মেটাতে বেশির ভাগ ব্যাংক স্বল্পমেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করছে দীর্ঘমেয়াদে। ঋণ ও আমানতের এ বিপরীতমুখী অবস্থানে ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের ব্যাংকের তালিকা তৈরি করছে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগে গ্রাহকদের কাছ থেকে যে আমানত নেয়া হয়েছিল, ওই সব আমানতের মেয়াদ পূর্তি হওয়ায় এককালীন মুনাফাসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে; কিন্তু নতুন আমানত কাক্সিক্ষত হারে আসছে না। এর বিপরীতে বাড়ছে ঋণপ্রবাহ। কিন্তু ব্যাংকের নগদ টাকা ও বিনিয়োগচাহিদা পূরণ করার প্রধান মাধ্যম আমানতপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। ফলে তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সামনে টাকার সঙ্কট আরো প্রকট হতে পারে। আগাম ঝুঁকি মোকাবেলায় আমানতপ্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে ব্যাংকগুলো। আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যে বাড়ানো হচ্ছে আমানতের মুনাফার হার। তবে এ নিয়ে ব্যাংক খাতে একধরনের অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ দিকে, ঋণকেলেঙ্কারির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর নতুন ব্যাংকগুলোর ওপর গ্রাহকদের আস্থা কমে গেছে। নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর কোনো কোনোটি আমানতের মুনাফা ১০ শতাংশের ওপরে নিয়ে গেছে। তবু মিলছে না আমানত।
এমন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সামনের দিকে ঋণ দেয়া তো দূরের কথা, দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোও দুষ্কর হয়ে পড়বে ব্যাংকগুলোর জন্য। সামনের দিনগুলোতে ব্যাংক খাতের নানামুখী সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি হওয়ায় ব্যাংকের আমানত চলে যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে। এতে ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। বিপরীত দিকে, ঋণের প্রবৃদ্ধি দিন দিন বাড়ছে। প্রচলিত ধারা অনুযায়ী আমানতের প্রবৃদ্ধির চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার কথা থাকলেও এটি হচ্ছে উল্টো, যা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। যে পরিমাণ ঋণ দেয়া হচ্ছে, নিয়ম অনুযায়ী তা উৎপাদনশীল খাতে যাচ্ছে না। ঋণ সঠিক কাজে ব্যবহার না করায় আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এতে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে যাচ্ছে। টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে কোনো কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এ পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে সরকারি ঋণ। সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ, রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া। ব্যবসায়-বাণিজ্যে মন্দা ও পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের আয়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যয় কমানো হচ্ছে। রাজস্ব আদায় ও বৈদেশিক অনুদান কমে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছর ১ জুলাই থেকে গত ২ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে চার হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা।
এ দিকে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে আমানতের সুদহার কম হওয়ায় ব্যাংকে আমানতপ্রবাহ কমে গেছে। বড় ঋণগ্রহীতারা কাক্সিক্ষত হারে ঋণ পরিশোধ করছেন না। এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে গেছে। এর ওপর, বড় ঋণখেলাপিদের ছাড়ের ঘোষণা দেয়ায় যারা এত দিন ঋণ পরিশোধ করতেন, তারা আর আগের মতো ঋণ পরিশোধ করছেন না। ফলে নগদ আদায় ব্যাপক হারে কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বেশি হারে ঋণ নিলে ব্যাংকগুলোর সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্যাংক খাতের এমন অবস্থা দীর্ঘ দিন চলতে থাকলে জাতীয় অর্থনীতিতে মন্দাভাবের প্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এতে দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। তাই রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এ প্রবণতা রোধ করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা