২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিশ্বব্যাপী কমছে মধ্যবিত্তের সংখ্যা

সমাজে অস্থিরতার আশঙ্কা

-

মধ্যবিত্ত শ্রেণী গণতন্ত্রের ভিত্তি। তারা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সমাজে ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তারাই গড়ে তোলেন ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সেতুবন্ধ। শাসন কাজে থাকেন নিয়ামক ভূমিকায়। সে জন্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এ শ্রেণীর ভূমিকা ব্যাপক। কিন্তু বিশ্বব্যাপী থমকে গেছে মধ্যবিত্তের উপার্জন। আগের সেই আর্থসামাজিক অবস্থা ধরে রাখতে পারছেন না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্র সঙ্কুুচিত হচ্ছে। এ শ্রেণীটি গুরুত্ব হারাচ্ছে গণতান্ত্রিক বিশ্বে।
বাংলাদেশেও মধ্যবিত্ত শ্রেণী ক্রমাগত হীনবল হয়ে পড়ছে। বহু মানুষ নিম্নবিত্তে পরিণত হচ্ছেন। নিজের একটা বাড়ি ও উচ্চশিক্ষা মধ্যবিত্তের আজন্ম লালিত স্বপ্ন। কিন্তু তা ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। মধ্যবিত্তের আরেকটি চাওয়া, নিরাপদ চাকরি। এটি যেন ‘সোনার হরিণ’। তাদের অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, মাঝসমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়া নৌকার যাত্রী। এর অন্যতম কারণ, দেশের সম্পদ অতি দ্রুত মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে। বৈষম্যমূলক এ প্রবণতা বিশ্বব্যাপী। সমগ্র পৃথিবীতেই কিছু মানুষের কাছে সম্পদ হচ্ছে কুক্ষিগত। ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণী সঙ্কুচিত হয়ে বাড়ছে অতি ধনীর সংখ্যা।
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ এক্সের হিসাবে, অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে এ দেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়েও বেশি। একই সংস্থার আরেক হিসাবে দেখা যায়, ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে। অবশ্য, দেশে দরিদ্রদের আয় কমছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়, সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ।
বিশ্বের ৩৬টি ধনী দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) ‘চাপের মুখে মধ্যবিত্ত সঙ্কুচিত হচ্ছে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ধনী দেশগুলোতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঙ্কোচন এবং অতি ধনীদের উত্থানের চিত্র তুলে ধরেছে। তাতে বলা হয়েছেÑ উন্নত দেশগুলো থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এর রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে। রাজনীতিতে যখন জনতুষ্টিবাদের প্রভাব বাড়ছে এবং চরমপন্থা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, তখন ঐতিহ্যগতভাবে এ মধ্যপন্থী মধ্যবিত্তের মনে ‘পিছিয়ে পড়ার’ বোধ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা যেন সমাজের মূল স্রোতধারার বাইরে চলে যাচ্ছেন। এ কারণে তাদের মধ্যে ‘ক্ষমতাকাঠামো’র বিরোধী রাজনীতিতে সমর্থন দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অতি ধনীদের সম্পদ বাড়লেও মধ্যবিত্তদের আয়বৃদ্ধির হার হতাশাজনক। ক্ষেত্রবিশেষে তারা পিছিয়েও পড়ছেন। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর আয় মধ্যম আয়ের মানুষের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ বেশি হারে বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মধ্যবিত্ত পরিবার মাসশেষে খরচের হিসাব মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর বার্ষিক আয় ১১-২০ শতাংশ বেড়েছে। এর বিপরীতে, মধ্যম আয়ের মানুষের আয় সামান্যই বেড়েছে।
বৈশ্বিক এমন প্রেক্ষাপটে দেশের শাসকশ্রেণীকে ভাবতে হবে, আমাদের সমাজবাস্তবতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আর্থসামাজিক অবস্থানের ভঙ্গুরতা রোধে বাস্তবসম্মত কী পদক্ষেপ নেয়া যায়। কিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তাদের অর্থনৈতিক শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো যেতে পারে। আমরা মনে করি, মধ্যবিত্ত শ্রেণী প্রধানত পেশাজীবী। এ জন্য তাদের উপযোগী কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। এর জন্য প্রথমেই দরকার, স্বল্পখরচে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এসব পদক্ষেপ যত দ্রুত নেয়া যাবে, সমাজে স্থিতিশীলতা আসবে তত দ্রুত।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল