২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মাদরাসাছাত্রী নুসরাতের মর্মান্তিক মৃত্যু

শিক্ষা প্রশাসনের টনক নড়বে কি?

-

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি মৃত্যুর সাথে কয়েকদিন লড়াই করে বুধবার রাতে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ শোধরানোর তাগিদ জোরালো হলো। অধ্যক্ষের চরম অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রকাশ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো। তার বিরুদ্ধে এর আগেও এক মাদরাসাছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ছিল। একজন অভিভাবক এর প্রতিকার চেয়ে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। সে চিঠির অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও দেয়া হয়। তবু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই দুশ্চরিত্র অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এখন আরো অন্যায়-অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা একই। কিছু অযোগ্য ও অসৎ ব্যক্তি স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক সেজে বসে আছেন। তারা অন্যায় ক্ষমতার বলয় তৈরি করে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিশোরী নুসরাতের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবরটি এমনভাবে ফলাও হয়েছে যে, রাষ্ট্রের একেবারে শীর্ষ ব্যক্তিদের নজরে এসেছে। তার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে স্বয়ং রাষ্ট্র। এ কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধেও জোরদার পদক্ষেপ নেয়ার অবকাশ তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগ ছিল, তিনি অপরাধীদের পক্ষেই কাজ করছিলেন। মাদরাসার ওই অধ্যক্ষের ক্ষমতাসীন দলের একটি চক্রের সাথে যোগসাজশ রয়েছে। মাদরাসার বিভিন্ন ফান্ডের টাকা তিনি তাদের জন্য দেদার খরচ করেছেন। এর বিনিময়ে অধ্যক্ষকেও তারা সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রাখেন। স্থানীয় রাজনীতিক ও পুলিশও সে দুষ্ট চক্রের সহযোগী হয়ে উঠেছে। জানা যায়, পর পর দু’টি শ্লীলতাহানির অভিযোগ ছাড়াও অধ্যক্ষকে নিজ দফতরে মেয়েদের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছে। তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান। তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের এক কোটি ৩৯ লাখ চার হাজার টাকার মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তিনি গত বছর জেলে গেলেও জামিনে মুক্ত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে মাদরাসা তহবিলের ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। এগুলো সব জঘন্য অপরাধ। এ ধরনের একজন লোক অধ্যক্ষ হওয়া তো দূরে থাক, মাদরাসার একজন সাধারণ শিক্ষক হওয়ার কথাও ভাবা যায় না। অথচ সে ব্যক্তি অধ্যক্ষ হিসেবে দাপটের সাথে টিকেছিলেন। বরং তার এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার হয়েছেন, তাদের কোণঠাসা করা হয়েছে। আগের শ্লীলতাহানির ব্যাপারে মুখ খোলায় তিনি তিনজন সহকর্মী শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এহেন চিত্র মূলত দেশের বৃহত্তর শিক্ষাঙ্গনের। একজন নুসরাতের প্রাণের বিনিময়ে হলেও এমন চরিত্রহীন অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীরা শাস্তির মুখোমুখি হবেন বলে আশা করা যায়। কিন্তু সারা দেশের এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরো যে অসংখ্য অপরাধী রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা কি নেয়া হবে?
যোগ্যতা, দক্ষতা ও নৈতিকতাÑ এগুলো দিয়ে শিক্ষকেরা আজকাল পদোন্নতি পান না। যারা নৈতিকতা ও দক্ষতা দেখাতে চান, তারা হয়ে পড়েন কোণঠাসা। সোনাগাজীর মাদরাসাটিতে তেমন উদাহরণ দেখা যাচ্ছে। নুসরাতের মতো একজন প্রতিবাদী মেয়ে অনমনীয়তার কারণেই অধ্যক্ষের কুৎসিত অপরাধ উন্মোচিত হয়েছে। অন্যথায় এমন অপরাধ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হতো বলেই মনে হচ্ছে। এ ধরনের একজন ব্যক্তি কিভাবে ‘মাদরাসার’ মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দাপটের সাথে এত দিন ছিলেন? এর জন্য আমাদের পুরো শিক্ষা প্রশাসন কি দায়ী নয়? বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের আরো কত লোক রয়েছেন, অনুমান করা যায়। সারা দেশে আরো যেসব নিপীড়ক ব্যক্তি শিক্ষক সেজে বসেছেন, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে কারা?

 


আরো সংবাদ



premium cement