২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
মায়ের কাছে ফিরলেন চিরতরে

সোহেল রানা সত্যিই ‘অগ্নিবীর’

-

বীরদের মৃত্যু নেই। তারা দেশ ও জাতির কাছে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর কাছে চিরদিনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকেন। বাংলাদেশের ‘অগ্নিবীর’ সোহেল রানা এমনই একজন মহান মানুষ, যিনি অন্যদের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবনই উৎসর্গ করে দিলেন। ২৮ মার্চ ঢাকায় বনানীর এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলা করতে নেমে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে সোহেল অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। আমরা পুরো জাতির পক্ষ থেকে তাকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। বাংলাদেশের এই সাহসী সন্তানের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি তার শোকাহত পরিজনের প্রতি রইল আমাদের অন্তরের মর্মমূল থেকে ঐকান্তিক সমবেদনা।
ভয়ঙ্কর অগ্নিশিখার তাণ্ডবের জের ধরে অবশেষে চিরবিদায় নিলেও তরুণ সোহেল প্রাণের বিনিময়ে বিপন্ন মানুষের প্রাণরক্ষার সংগ্রামের সুবাদে এখন ‘অগ্নিবীর’। সমাজের সর্বস্তরে চরম স্বার্থদুষ্টতার এই দূষিত সময়ে সোহেল রানা প্রমাণ করেছেনÑ ‘মানুষ মানুষের জন্য,/ জীবন জীবনের জন্য,/ ও বন্ধু, মানুষ একটু ভালোবাসা কি পেতে পারে না?’ তার মতো এমন একজন মহৎ হৃদয় ব্যক্তির জন্য জাতি নিঃসন্দেহে গর্ব করতে পারে।
দমকলবাহিনীর সাধারণ ফায়ারম্যান সোহেল রানা নেহাত দরিদ্র ঘরের ছেলে। কিন্তু দায়িত্ববোধ ও মানবতার অসাধারণ নজির স্থাপন করার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন, আচরণ ও মানসিকতার দিক দিয়ে তিনি মোটেও দরিদ্র নন। চিত্তের বিত্তই মানুষকে প্রকৃত মানবিক ও আদর্শস্থানীয় করে তোলে। কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের গরিব কৃষিজীবী নুরুল ইসলামের ছেলে সোহেল এর উজ্জ্বল উদাহরণ। ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে তার ফেরার কথা ছিল মা হালিমা খাতুনের কাছে। নিয়তির লিখন এমন যে, মর্মান্তিক অকালমৃত্যুর ঘটনায় সোহেল রানা সেই মায়ের কাছে ফিরলেন লাশ হয়ে। এখন যেন তার ‘চিরদিনের ছুটি’। শোকাকুল মায়ের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস বিষণœ হয়ে উঠেছে।
ঢাকার বনানীর ২৩ তলা হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে আগুনে আটকা পড়া মানুষ বাঁচাতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন সোহেল রানা। এর পর থেকে তিনি প্রথমে ঢাকার সিএমএইচে এবং পরে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ছিলেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ১১ দিন লড়াই করার পর অবশেষে ৮ এপ্রিল তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে অচেনা অনন্ত জগতে প্রস্থান করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিন বছর আগে অগ্নিনির্বাপক সংস্থায় চাকরির নিয়োগপত্র পেয়ে মাকে সালাম করে সোহেল বলেছিলেন, ‘দোয়া করো, যাতে দেশের সেবায় জীবন দিতে পারি।’ আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করেছেন। দেশ তার আত্মোৎসর্গের কী প্রতিদান দেবে, সে দিকে সবার নজর থাকবে বৈকি।
সোহেলের মৃত্যুর ক্ষতি অপূরণীয়। দরিদ্র পরিবারটি কিছুটা সান্ত্বনা পেতে পারে যদি পর্যাপ্ত আর্থিক সাহায্য এবং তার পরিবারের কাউকে চাকরি প্রদান করা হয়। মনে রাখতে হবে, বীরের দেশেই বীরেরা জন্ম নেন। যে জাতি তার মহান সন্তানদের ভুলে যায় কিংবা যথার্থ মূল্যায়ন করে না, সে জাতি সত্যিই দুর্ভাগা। সোহেলের আদর্শ আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক।


আরো সংবাদ



premium cement