১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নির্বাচনোত্তর ব্যাপক সহিংসতা

শৈলকুপায় নৈরাজ্যের অবসান জরুরি

-

“ডেটলাইন ঝিনাইদহ, ভোটের জেরে তাণ্ডব, ঘরছাড়া শ’ শ’ পরিবার।” গতকাল বুধবার এটি ছিল একটি দৈনিকের শীর্ষ শিরোনাম। খবরটি শুরু হয়েছে এভাবে, ‘এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি চলছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। চলছে মধ্যযুগীয় কারবার। কথায় কথায় লুটপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর এখানে কোনো বিষয়ই নয়।’
খবরে বলা হয়েছে, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না। তীব্র হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি। যখন তখন চলছে আদিম যুগের মতো উপদলীয় সহিংসতা। হচ্ছে বাড়িঘর ভাঙচুর, জিনিসপত্র লুটপাট ও গরু-ছাগল ছিনতাই। এমন পরিস্থিতিতে শত শত পরিবার নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
জানা যায়, গত উপজেলা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার দলের মনোনয়ন পেলেও তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি শিকদার মোশাররফ হোসেন। এই দুই নেতাকে ঘিরে নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। শুরু হয়ে যায় নেতাকর্মীদের মধ্যে রেষারেষি ও শত্রুতা। দলের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আরিফ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন করেন। তার সাথে ছিলেন শৈলকুপা পৌর সভাপতি ও মেয়র কাজী আশরাফুল আজম। নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা শুরু করেন। নির্বাচনের আগে ছোটখাটো সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বিভিন্ন গ্রামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। হামলা-ভাঙচুরের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে একজনের ছাগল লুট করে তারই বাড়ির সামনে জবাই করে ভূরিভোজ করেছে অন্য পক্ষের লোকজন। পরিস্থিতির কত বেশি অবনতি ঘটলে এমনটি ঘটতে পারে তা অনুমেয়। খবরে বলা হয়েছে, একই চিত্র ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ড ও কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের। সেখানেও দলীয় নেতাকর্মীসহ শত শত মানুষ প্রাণভয়ে বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আওয়ামী লীগ কর্মী অভিযোগ করেন, নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার কারণে আনারস মার্কার সমর্থকেরা বাড়িতে ঢুকে তাকে, তার ছেলে ও নাতনীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি, এ দল এখন ক্ষমতায়, তবুও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের হাতেই মার খেতে হচ্ছে; আবার ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
অবস্থা দেখে মনে হয় না সেখানে কোনো সামাজিক শৃঙ্খলা, কোনো প্রশাসন ও কোনো সরকার আছে। স্বাভাবিক সময়েও একটি জনপদে আইনশৃঙ্খলার এতটা অবনতি কিভাবে ঘটতে পারে তা বোধগম্য নয়। দেশটিকে সভ্য বলে মনে করতেও যেন মনে দ্বিধা জাগে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) নেতা আবু তাহের বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ও পরে শৈলকুপায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে যে মারামারি-ভাঙচুর চলেছে তা কোনো সভ্য মানুষের কাম্য নয়। তিনি বলেন, ‘ওই দুই প্রার্থীর একসাথে বসে এ সমস্যা মিটিয়ে ফেলা উচিত। প্রয়োজনে প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সহিংসতায় সাধারণ মানুষের জানমালের চরম ক্ষতি হচ্ছে।’
এসব ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন সব সময় যেমনটা বলে থাকে, ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপারও ঠিক সে কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সহিংসতা বন্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। যেসব নেতাকর্মী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তারা নির্দিষ্ট অভিযোগ না দেয়ায় সন্ত্রাসীদের ধরতে পারছি না।’ প্রশাসনের সাম্প্রতিক প্রবণতা অনুযায়ী অনেকটা রাজনৈতিক নেতার মতো তিনি বলেছেন, ‘যারা সহিংসতার সাথে জড়িত, যারা শান্তি বিঘিœত করেছে, তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী যত ক্ষমতাধর হোক, আর যে দলেরই হোক না কেন তাদের আটক করে আইনের আওতায় এনে অবশ্যই বিচার করা হবে।’
পুলিশের এ ধরনের কথা বারবার শুনে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিশেষত শৈলকুপায় আইনশৃঙ্খলা বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এখনই সেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

সকল