২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জনপ্রিয় কাজাখ প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরকে সাধুবাদ

-

সম্প্রতি কাজাখস্তানের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট নূর সুলতান নাজার বায়েভ অনেকটা আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেছেন। ৩০ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার পর তিনি স্বেচ্ছায় এই পদত্যাগ করেন। সাবেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ অংশ হিসেবে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই কাজাখস্তানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। কিন্তু একদম হঠাৎ করেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই তার এই পদত্যাগে বিস্মিত হয়েছেন। কারণ, জনপ্রিয় এই প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন, এমন কোনো দৃশ্যমান কারণ ছিল না।
৭৮ বছর বয়সী নূর সুলতান নাজার বায়েভ ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিন দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সফল বলেই সর্বমহলে তিনি বিবেচিত। এই দীর্ঘ সময় তিনি তেলসমৃদ্ধ দেশ কাজাখস্তানের নেতৃত্ব দিয়েছেন জনগণের সন্তুষ্টির সাথে। তার বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগও কোনো মহল থেকে শোনা যায়নি। এর পরও তিনি একটি টেলিভিশনে স্বেচ্ছায় তার এই পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এই পদত্যাগ সহজ কাজ ছিল না। তবে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের সুযোগ করে দিতেই পদত্যাগ করেছেন। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তার বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভ বা জন-অসন্তোষের খবরও পাওয়া যায় না। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের স্পিকার কাশিম জমরাটের হাতে। পদত্যাগের আগে কাজাখদের জীবন-মান উন্নয়নের পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। পদত্যাগ করলেও তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন দলের প্রধান থাকবেন। একই সাথে কাজাখস্তানের নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। তা ছাড়া, তিনি জাতীয় নেতার পদবি ধারণ করবেন।
গত মঙ্গলবার বিদায়ী ভাষণে তিনি বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজাখস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতির দেখাশোনা করব। আমি চাই, নতুন প্রজন্ম থেকে কেউ দেশের হাল ধরতে শিখুক। অবশ্য এ সময় তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাশিম জমরাটের নাম ঘোষণা করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত নাজার বায়েভ প্রাথমিক জীবনে ইস্পাত কারখানায় কাজ করতেন। কমিউনিস্ট শাসক হলেও কাজাখস্তানে তিনি ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। পেয়েছেন কাজাখদের ভালোবাসাও। কমিউনিস্ট পার্টির হাত ধরে রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। ১৯৮৯ সালে কাজাখস্তান কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। সে সময় কাজাখস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে কাজাখস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর ১৯৯৯, ২০০৫, ২০১১ ও ২০১৫ সালের নির্বাচনে নাজার বায়েভ বিপুল ভোটে জয়ী হন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধীরগতি হওয়ায় অর্থনীতি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। রাশিয়ার সাথে তার দেশ সব সময় সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
তার রাজনৈতিক আদর্শগত অবস্থান বিবেচনায় না নিয়েও বলা যায়, তার এই শান্তিপূর্ণ পদত্যাগের ঘটনা থেকে বাকি দেশগুলোর শাসকদের শেখার আছে। কারণ, পৃথিবীর বহু দেশেই শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের পদত্যাগ খুব একটা ঘটতে দেখা যাচ্ছে না। তবে দুই বছরের জন্য কাশিম জমরাটকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে তিনি ক্ষমতায় থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রেখে বিদায় নিতে পারলে ভালো হতো।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement