২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আলুর বাম্পার ফলন, তবু বিষণœ মুখ

চাষি ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ দূর করুন

-

দেশে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে আলুর। ২০ বছরের কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে আলু ব্যবসায়ীদের। তবু সমস্যা দূর হয়নি আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও কোল্ডস্টোরেজ মালিকদের। এর কারণ, অসময়ে অতিবর্ষণে একত্রে সব আলু ঘরে তুলে আনতে হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও আলু বিক্রি করে উপযুক্ত দাম মিলছে না। তা ছাড়া, এত আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা দেশে নেই। এ দিকে নগদ অর্থের অভাবে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ অবস্থায় কম দামে আলু বিক্রি করে লাভ করা দূরের কথা, উৎপাদন খরচ তোলাও সম্ভব হচ্ছে না।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানানো হয়, গড়ে এক বিঘা জমিতে এবার আলু পাওয়া গেছে ৮০-৯০ বস্তা। তবে এতে কৃষকের যে আনন্দ, তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে বাজারে আলু বেচতে গিয়ে। কারণ, দাম এত কম যে, এতে শ্রমিকের মজুরি দেয়াও তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মাত্র পাঁচ-ছয় টাকা দরে কৃষকেরা আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারপরও ক্রেতার সঙ্কট। অথচ খুচরা বাজারে আলুর দাম প্রতি কেজি ২০ টাকা এবং অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি। চাষি এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা পাচ্ছেন। অর্থাৎ কেজিপ্রতি আলুর দাম পড়ছে মাত্র পাঁচ টাকার মতো। বিঘাপ্রতি আলু উৎপাদন ব্যয় এর চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি। যারা লিজ নিয়ে আলু চাষ করেছেন কিংবা যাদের উৎপাদন হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম, তাদের লোকসান দিতে হচ্ছে বেশি। এক বিঘা জমি লিজ নিতে গিয়ে খরচ হয়ে যায় ১২-১৫ হাজার টাকা। কোল্ডস্টোরেজে আলু রাখার খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে সেই টাকা জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে কম দামে আলু বিক্রি করতে হয়। গত দুই বছর আলুতে অনেক লোকসান হয়েছে। ফলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের বিরাট অংশই ঋণ শোধ করতে পারেননি। তারা ঋণখেলাপি হওয়ায় এবার ঋণ পাচ্ছেন না। আলুচাষি ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনঃতফসিল সংক্রান্ত সুবিধা দেয়ার জন্য সরকারি নির্দেশ বেসরকারি ব্যাংকগুলো বাস্তবায়নে রাজি হচ্ছে না।
জানা যায়, সরকার আলু রফতানির কথা বারবার বললেও এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। ভালো প্রজাতির আলু উৎপাদন ছাড়া রফতানিবাজার পাওয়া সম্ভব নয়। দেশে ৪০টি উন্নত জাতের আলুর চাষ হচ্ছে। ৮০ শতাংশ জমিতে উফশী জাতের আলু চাষ করা হয়। কিন্তু ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এমন আলুবীজ ব্যবহার করা হয়, যা প্রত্যয়ন করা হয়নি। আলুর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ, যথাযথ উপকরণ, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা আজো উন্নত নয়। প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও মোড়কের ক্ষেত্রেও মান আশানুরূপ হয়নি। আরো জানা গেছে, চলতি বছর দেশে ৯৫ লাখ টন আলু উৎপন্ন হওয়ার কথা। এর ৫৫ লাখ টনই সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু ঋণসংক্রান্ত জটিলতায় আলু সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। অথচ সময়মতো সংগ্রহ করা না গেলে আলু নষ্ট হয়ে যাবে এবং পরে এ কারণে দাম অনেক বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে অন্যান্য খাদ্যের ওপর।
আমরা আশা করি, আলুর মতো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বিপণনে নিয়োজিত ব্যক্তিরা, অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সব কৃষিজীবী ও ব্যবসায়ী যেসব সমস্যার সম্মুখীন, সরকার অবিলম্বে সেগুলোর সুরাহা করতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেবে। অন্যথায় আলুর সঙ্কটে দাম বেড়ে গেলে দেশের সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement