১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সন্ত্রাসের প্রধান কারণ বর্ণবাদী চিন্তা

উগ্রবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দরকার

-

ব্রেন্টন ট্যারান্টও আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো বড় হয়েছে। স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে চলাচল করেছে। নিউজিল্যান্ডের দু’টি মসজিদে গুলি চালিয়ে অর্ধশত মুসলমানকে হত্যার পর বোঝা গেল তার অন্তরে কতটা বিদ্বেষ জমা হয়েছিল। এই বিদ্বেষ ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে আগত অশ্বেতাঙ্গ বিশেষত মুসলমানদের প্রতি। আদালতে তার যে মনোভাব প্রকাশ পেল তাতে স্পষ্ট এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে সে মোটেই অনুতপ্ত নয়। সে এ ধরনের মানুষ হত্যাকে ‘একটি সফল কাজ’ হিসেবে দেখছে। বিচারকের সামনে সে হেসেছে, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিশেষ চিহ্ন আঙুল বৃত্তাকার করে বুঝিয়েছে। একটা মানুষের মনে কতটা ঘৃণা পোষণ করলে এমন পাশবিক হতে পারে। এই পাশবিকতা নিশ্চয়ই আপনা থেকে তার মধ্যে বিকশিত হয়নি। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের ধারণা বহু আগের। তারই ধারাবাহিকতায় আমেরিকায় সৃষ্টি হতে পেরেছে কু ক্লাক্স ক্ল্যানের (কেকেকে) মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক হিংস্র গোষ্ঠীর।
ইউরোপ-আমেরিকায় নতুন করে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে। এ ধরনের উত্থানের মূলে রয়েছে নিজেদের বিশিষ্ট মানুষ হিসেবে অন্যদের চেয়ে বিশেষ অধিকারভুক্ত মনে করা। শ্বেতাঙ্গদের একটি অংশ মনে করে, পশ্চিমা বিশ্বে যে উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি কেবল সাদা মানুষেরা ভোগ করবে। তাদের মতে, এসব দেশে অন্যান্য ধর্ম ও বর্ণের মানুষেরা এসে সুযোগ সুবিধায় ভাগ বসাচ্ছে। উগ্র সাদা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সেসব দেশ থেকে অন্যদের তাড়াতে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিচ্ছে। এর আগেও সাদা উগ্রবাদীদের মসজিদে হামলা চালাতে দেখা গেছে। ২০১৭ সালে কানাডার কুইবেক সিটি মসজিদে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামে এক উগ্রবাদী। ২০১১ সালে নরওয়ের অ্যানডার্স বেরিং ব্রেইভিক গুলি চালিয়ে হত্যা করে ৭৭ জনকে। গির্জা ও উপাসনালয়েও হামলার কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল অশ্বেতাঙ্গরা। খ্রিষ্টান উগ্রবাদী সংগঠন কেকেকে আঠারো ও উনিশ শতকে আমেরিকায় লাখ লাখ কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করেছে। আফ্রিকান ও আদিবাসী আমেরিকানদের ওপর তারা কয়েক শতক ধরে হামলা চালিয়েছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি কেকেকে’র প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি এ সংগঠনের লোকদের ভালো মানুষ বলে প্রচার করেছেন। ইউরোপেও এ ধরনের রাজনীতির প্রসার ঘটছে। সেখানে সাদাদের একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার ডাক দিচ্ছে উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদীরা। সাম্প্রতিক ইতিহাসে আমেরিকায় যত হামলা হয়েছে, তার দুই-তৃতীয়াংশ চালিয়েছে উগ্র শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ব্যক্তি কিংবা গ্রুপগুলো। এক গবেষণায় এমন ফলাফল পাওয়া গেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সন্ত্রাসের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সমান নয়। শ্বেতাঙ্গরা যখন হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, সেটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে বিকারগ্রস্ত পাগলÑ এমন অভিধা দিয়ে লঘু শাস্তি দিয়ে বিচারকাজ শেষ করা হচ্ছে। অন্য দিকে বিশেষত মুসলমান কিংবা কালোরা কোনো সন্ত্রাস করলে তাকে নিয়ে প্রবল প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। তাদের পেছনে যারা জড়িত নেই, তাদেরকেও অভিযুক্ত করার অপপ্রয়াস দেখা যাচ্ছে। ফলে একই অপরাধের দুই ধরনের বিচার হচ্ছে।
ট্যারান্টের চিন্তাভাবনা ও মোটিভ স্পষ্ট। তিনি চান অভিবাসীমুক্ত শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের একটি বিশ্ব, যেখানে সব সম্পদ এককভাবে ভোগ করবে শ্বেতাঙ্গরা। অন্য বর্ণের মানুষেরা তার চিন্তাভাবনায় প্রকৃত মানুষ নয়। তারা মানুষের একটি উপজাত। তাই তাদের সুযোগ-সুবিধা ও বাঁচার অধিকারও সীমিত হবে। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক চিন্তার অপনোদন করতে হবে। ট্যারান্টের মতো ব্যক্তিদের যারা গড়ে তুলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তার আগে দরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবার একই ধরনের মানসিকতা গ্রহণ। অবশ্যই ধর্ম-বর্ণের বিবেচনায় সন্ত্রাসকে দেখা যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

সকল