২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

বিদেশী ঋণের দিকে নজর দিতে হবে

-

বাংলাদেশের জিডিপির আড়াই শতাংশ খেয়ে ফেলছে সুদ। অর্থাৎ জাতীয় বাজেটের একটি বিরাট অংশ ব্যয় হয় সরকারের নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করতে। বেশ কয়েক বছর ধরে সরকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়নসহ রাষ্ট্র পরিচালনার নানা কাজে ব্যবহার করছে। বিদেশী ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।
নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আড়াই শতাংশ। অন্য দিকে চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনুন্নয়ন ব্যয়ের মোট ২৭ ভাগই ব্যয় হয়েছে সুদ পরিশোধে। এটিই এখন অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রধান খাত। চলতি বাজেটে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা বছর শেষে ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ দিকে, সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ব্যাপক ঋণ গ্রহণের কারণে সুদ পরিশোধে প্রতি বছরই ব্যয় বেড়েছে। সুদ পরিশোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩০ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ১১৩ কোটি টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা সরকার ব্যয় করেছে। সর্বশেষ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুদ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশাল অঙ্কের বাজেট ঘোষণার নতুন এক সংস্কৃতি চালু করেছে। বিশাল বাজেটে থাকছে বিশাল ঘাটতিও। আর এ ঘাটতি মেটাতে সরকার ঋণ নেয়ার পরিমাণও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশী সহায়তা কমে যাওয়ায় দেশ চালাতে সরকার ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এর ফলে হয়তো সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কিছুটা কমবে এবং সরকারের ওপর সুদ পরিশোধের চাপও কমবে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র কেনেন অতি সাধারণ চাকরিজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা। অনেকেই চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর সঞ্চয়পত্র খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং এর সুদের ওপর নির্ভর করে শেষ জীবন নির্বিঘেœ কাটিয়ে দেয়ার প্রয়াস পান। সঞ্চয়পত্র হলো, এসব সাধারণ মানুষের জন্য রাষ্ট্রের একটি কল্যাণধর্মী সেবা। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমালে একান্তভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ, যাদের আয়ের হয়তো অন্য কোনো উপায় নেই। একটি রাষ্ট্রীয় সেবামূলক কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করলে সার্বিকভাবে অর্থনীতির ওপর যে চাপ বাড়বে তা না বোঝার কোনো কারণ নেই।
এর সমাধান কী হতে পারে, সেটা ভেবে দেখা দরকার। বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই বলে এসেছেন, আমাদের কর আদায়ের রাষ্ট্রযন্ত্র সুদক্ষ নয়। বর্তমানে দেশে কর আদায়ের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশেরও কম। প্রতিযোগী সব দেশের তুলনায় এই হার কম। অথচ অর্থনীতি জোরদার করতে হলে কর আদায়ের পরিমাণ হওয়া উচিত জিডিপির অন্তত ১৫-১৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম একটি দৈনিককে বলেছিলেন, করের হার বাড়াতে না পারলে ঋণ কমবে না। ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানো ভালো পদক্ষেপ নয়।’
আমাদের বিশ্বাস, সরকার যদি কর আদায় কার্যক্রমে দক্ষতা ও গতিশীলতা আনতে পারে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সেই সাথে, বিদেশী ঋণ ও সহায়তা সংগ্রহে মনোযোগী হতে হবে। বিদেশী ঋণ সস্তা এবং সুদ পরিশোধের জন্য দীর্ঘ সময় পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশী ঋণ প্রায়ই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, সুশাসন, মানবাধিকার, পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক কূটনীতি ইত্যাদি অনেক কিছুর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
গত ১০ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি, সুশাসন, মানবাধিকার সম্পর্কিত সূচকগুলোতে খুব একটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়টি ভেবে দেখলে তা সরকারের জন্য যেমন, তেমনি জনগণ তথা দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে।


আরো সংবাদ



premium cement