২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করুন

-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর নতুন করে প্রতিবেদন দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, জালিয়াতি ও কারচুপির বিষয়টি এ প্রতিবেদনে আবার সামনে এসেছে। এই সংসদ নির্বাচনের আগে গত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। দলীয় সরকারের অধীনে এ দেশে এখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই ক্ষমতাসীন দল ছাড়া সবার পক্ষ থেকে দাবি উত্থাপন হয়েছিল, জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হোক। তবু ক্ষমতাসীন দল সবার দাবিকে উপেক্ষা করে নিজেদের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করে। সে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের একচেটিয়া বিজয় নিশ্চিত করা হয়। সরকার জবরদস্তি করে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় নির্বাচনী অনিয়ম-কারচুপি নিয়ে প্রতিবাদও করা যায়নি। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে এ নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয়নি, সেটি মুছে ফেলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন এখন একটি ছেলেখেলায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হলেও কোনো বিবেচনায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। ভোটারদের ও বিরোধী দলকে অব্যাহত হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ পায়নি বিরোধীরা। সভা-সমাবেশে বাধার সৃষ্টি করা হয়। দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সীমিত করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাইয়ের নামে পর্যবেক্ষকদের ঠেকিয়ে রেখেছে। একইভাবে, সরকার বিদেশী পর্যবেক্ষকদের এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নানাভাবে সীমিত করেছে। প্রধান বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ তাকে অভিযুক্ত করার জন্য প্রমাণের অভাব ছিল। আইনশৃঙ্খলাবহির্ভূত হত্যা এবং গণমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি আরোপের বিষয় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সরকার নানাভাবে মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সন্ত্রাসবাদ থামানোর নামে নানা অভিযান পরিচালনা করছে। এ সময় বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। ওই অভিযানে সতীর্থদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিহত হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী খবর দেয়। মানবাধিকার সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর প্রায় ৪০০ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমও নানাভাবে অক্রান্ত হচ্ছে। স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে তারা। সরকারের একধরনের বজ্র আঁটুনির মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ রয়েছে। এ অবস্থায় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অর্থহীন হয়ে পড়ছে। এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মানুষ একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্য দিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ থাকার পরও তা ব্যর্থ হয়েছে। এ নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ও প্রশাসন অনেকটাই জাতীয় নির্বাচনের স্টাইলে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর পরও পূর্ণ প্যানেলে তারা জয় না পেলেও জোরজবরদস্তির জন্য নির্বাচনটি অনেকটাই যেন পণ্ড হয়ে গেছে।
মোট কথা, বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের সাথে সরকারও দায়ী। নির্বাচন কমিশন সংবিধান তাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, সেটি পালন করেনি। এ জন্য এককভাবে তারা দায়ী, এটাও সম্ভবত বলা যাচ্ছে না। কারণ, আগে থেকেই সরকার গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এ অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ নিলে তারা সফল হবে না, তা মনে করেই সম্ভবত কমিশন সে পথে হাঁটেনি। সরকার নিজেদের ‘গণতান্ত্রিক’ দাবি করলে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অবশ্যই সঠিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement