২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রতিবেদন

রিজার্ভ কমে যাওয়া কি শঙ্কার নয়?

-

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৯৮ কোটি ডলার) কমেছে। সাধারণ পণ্য ও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি, দুটোই গড়ে কমলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের রাজস্ব আয় বেড়েছে ১২.৯ শতাংশ। তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন কমেছে ২.৩২ শতাংশ এবং আমদানিব্যয় বেড়েছে ৩.২১ শতাংশ। রফতানি আয়ও বেড়েছে ১.২৮ শতাংশ। গত রোববার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি বছরের বাজেট বাস্তবায়নের ওপর প্রথম তিন মাসের যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, তাতে এই চিত্র উঠে আসে।
রিজার্ভের ব্যাপারে প্রতিবেদনে মন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে, যা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে ছিল তিন হাজার ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার (৩১.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। তা দিয়ে ৬.৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু মন্ত্রীর দেয়া তুলনামূলক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তিন হাজার ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ চলতি বছরে প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৮ কোটি মার্কিন ডলার কমেছে।
মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, রিজার্ভ ‘মোটামুটি স্থিতিশীল’ থাকা আর প্রায় ১০০ কোটি ডলার কমে যাওয়ার মধ্যে ব্যবধান কিন্তু সামান্য নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো এতটা সবল নয় যে, ১০০ কোটি ডলারের ঘাটতি ‘খুব সামান্য’ বলে উড়িয়ে দেয়া যায়। তবে যে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাকে সাবেক অর্থমন্ত্রী ‘সামান্য ব্যাপার’ বলে উড়িয়ে দিতে পারেন, সে দেশে এটি তেমন কোনো বিষয় না-ও হতে পারে।
শঙ্কার কারণ হলো, অর্থনীতির কোনো নেতিবাচক প্রবণতা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলে তার পরিণতি কখনোই ভালো হতে পারে না। একটি দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি, তার সবলতা ও দুর্বলতা সবই যথাযথভাবে পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত না হলে যারা এর সাথে সংশ্লিষ্ট, তারাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে পারেন। কারণ, ভুল পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নেয়া যেকোনো পরিকল্পনা বা প্রকল্প অর্থনীতিকে ভুল দিকে নিয়ে যেতে পারে। রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যানের ওপর মানুষের আস্থা একবার নষ্ট হলে তা পুনরুদ্ধার করা দুঃসাধ্য। বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেকটাই এখনো বিদেশী ঋণ এবং অন্যান্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির পরিসংখ্যানগুলো সঠিক নয় বলে বিদেশীদের কাছে একবার প্রতীয়মান হলে তার ফল ভালো হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আমরা আশা করব, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান দেয়া হবে, তা নির্ভুল এবং অবিকৃতভাবে প্রকাশ করা হবে। এটি দেশবাসীর জন্য যেমন, তেমনি সরকারের জন্যও মঙ্গলজনক।
বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিগত অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে অবনমন ঘটেছে ৩.৬৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বর ২০১৭ শেষে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ৮৩.৭৫ টাকায়। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৮০.৮০ টাকা। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার এই অবনমনের ফলে রফতানি ও প্রবাসী আয় উৎসাহিত হবে বলেও মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ৩.৬৫ শতাংশ কমলেও রফতানি আয় সে হারে বাড়েনি। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি আয় বেড়েছে মাত্র ১.২৮ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী জানান, রফতানি আয় বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ৮.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৯.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৭৫ শতাংশ, বিগত অর্থবছরে যা ছিল ৭.৬১ শতাংশ। প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ বলা যায়। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৭৩ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতির খাতভিত্তিক অগ্রগতির যে চিত্র তাতে আশাবাদী হওয়ার পূর্ণ সুযোগ রয়েছে। আমরাও আশাবাদী হতে চাই যে, দেশের জনসম্পদকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থনীতিকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের অর্থনীতির পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement