২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির উৎস

দুদকের প্রতিবেদন আমলে নিন

-

রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর হলো, অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকার ও দেশের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং ব্যয়ভার বহন করা এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। সবার জানা, অর্থের সাথে রয়েছে দুর্নীতির নিবিড় সম্পর্ক। অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির সম্ভাব্য ৩৩টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোতে সম্ভাব্য এসব উৎস চিহ্নিত করে প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছে দুদক। ২০১৭ সালে দুদক ২৫টি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে যে ২৫টি টিম গঠন করেছিল, তারই একটি এই প্রতিবেদন দিয়েছে।
একটি সহযোগী দৈনিকের এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়গুলো সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে অনিয়মিতভাবে হলেও অর্থ নিয়ে থাকে। পেনশনের টাকা আটকে রেখেও দুর্নীতি করা হয়। আবার ভুয়া ভ্রমণভাতা ও বিনোদনভাতার বিল পরিশোধের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন কার্যালয়গুলোর একশ্রেণীর কর্মচারী। উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়েও দুর্নীতি করেন তারা।
দুর্নীতি ও অনিয়মের অন্য উৎসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ সরকারি কর্মচারীদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পর হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের একশ্রেণীর কর্মচারী শেষ বেতনপত্র নতুন কর্মস্থলে পাঠাতে এবং অবসরে যাওয়ার পরও তা পাঠাতে দেরি করেন। আরো আছেÑ হয়রানি ছাড়া সার্ভিস বিবৃতি না দেয়া; সার্ভিস বুক ভেরিফিকেশন, এরিয়ার বিল দাখিলের পর এবং পে-ফিক্সেশনের বেলায় টাকা নেয়া, ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) হিসাব খোলা, জিপিএফের অগ্রিম অর্থ উত্তোলনের সময় এবং জিপিএফ হিসাব থেকে চূড়ান্ত অর্থ পরিশোধের বেলায় নিয়মিতভাবে টাকা আদায়, সরকারি বিভিন্ন অগ্রিম বিল দেয়ার সময় আর্থিক সুবিধা আদায় ইত্যাদি ৩৩টি উৎস। দুর্নীতির এসব উৎসমুখ রোধে কার্যালয়গুলোতে জনবল বাড়ানোসহ ২১টি সুপারিশ করেছে দুদক।
আমাদের দেশে দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সরকারি দফতরগুলোতে দুর্নীতি ওপেনসিক্রেট। এর জাঁতাকলে চিঁড়েচ্যাপ্টা হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যারা সমাজে নিরীহ ও দুর্বল তারাই দুর্নীতির বেশি শিকার হয়ে থাকেন। বর্তমান সরকার নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সময় থেকেই বলে আসছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান হলো ‘জিরো টলারেন্স’।
প্রতিনিয়ত দুর্নীতির খবর মিডিয়ায় আসছে। দেশবাসী দেখছেন, একজন নিম্ন বেতনভুক সরকারি কর্মচারী কিভাবে বিপুল বিত্তবৈভবের ‘মালিক’ বনে যাচ্ছেন। এর সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ দিকে, দিন দিন দুর্নীতির মাত্রা না কমে বেড়েই চলেছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনবে। কিন্তু দেশে বিচারহীনতার কারণে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বেশির ভাগ সময় আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না বা আনা যাচ্ছে না। ফলে দুর্নীতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষণ কার্যালয়গুলোতে দুর্নীতির যে উৎসমুখ দুদক চিহ্নিত করেছে তা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। একই সাথে দুদকের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে দ্রুত। বাকি সুপারিশগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দফতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement