২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
ট্রেনের ধাক্কায় ৫ বছরে ৪৬১৪ জনের মৃত্যু

মোবাইল ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি

-

ট্রেনের ধাক্কায় বা এর চাকায় কাটা পড়ে প্রাণহানি ঘটছে প্রায় প্রতিদিন। গত মাসে মাত্র দুই দিনে ঢাকায় এ জাতীয় ঘটনায় একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ চারজন নিহত হয়েছে। একটি সহযোগী দৈনিকের লিড নিউজে এ সংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরে জানানো হয়েছে, রেলওয়ে পুলিশ সূত্রমতে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে রেললাইনে মৃত্যু ঘটেছে চার হাজার ৬১৪ জনের। এর মধ্যে ২০১৫, ’১৬ ও ’১৭ সালে যথাক্রমে ৮২১, ৯৭১ ও ১০২২ জন মারা গেছে। অর্থাৎ রেলপথে অপমৃত্যুর ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এসব মৃত্যুর একটা বড় অংশই ঢাকা রেলওয়ে থানার আওতাভুক্ত এলাকায় ঘটছে। ২০১৮ সালে এখানে প্রাণ হারিয়েছে ২৮২ জন। আরো জানা গেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে অসতর্কতার দরুন রেললাইনে মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সর্বাধিক।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রেলপথে মৃত্যুর জন্য প্রধানত সাতটি কারণ দায়ী। এর মধ্যে প্রথমেই আছে রেললাইন পার হওয়ার সময় মোবাইলে কথা বলা এবং হেডফোনে গান শোনার বিষয়। তা ছাড়া, বাঁকা লাইনের কারণে ট্রেন না দেখা, রেললাইন ধরে হাঁটতে থাকা, অন্যমনস্ক চলাচল, শব্দদূষণে ট্রেনের শব্দ বুঝতে না পারা, রেললাইনের পাশের অবৈধ স্থাপনা দ্রুতবেগে আগমনরত ট্রেনকে আড়াল করে রাখা, রেললাইনে বা পাশেই প্রস্রাব করার বদ অভ্যাস প্রভৃতি কারণেও মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারায়। রেল পুলিশের মতে, রাজধানীর তেজগাঁও থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত অংশে এই দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি। রেল করিডোরে প্রবেশ রোধ এবং আলাদা তলে রেললাইন স্থাপন করা হলে ট্রেনের ধাক্কায় মানুষের মৃত্যু বন্ধ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রেললাইনে বারবার অপমৃত্যুর একটা বড় কারণ হলো, সারা দেশে শত শত অবৈধ বা বেআইনি রেলক্রসিং। এগুলো খোলা দেখে এবং সেখানে কোনো প্রহরী না থাকায় লোকজন ও যানবাহন যখন তখন খেয়ালখুশি মতো রেললাইন পার হতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এতে পথচারী ও যাত্রীরা হচ্ছে হতাহত এবং যানের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৩২৮টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৩২৬টি অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ঢাকায় কোনো কোনো সংস্থা কর্তৃক রাস্তা তৈরি করার সময়ও কোথাও কোথাও অবৈধ রেলক্রসিং সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বিশেষ করে, ঢাকা মহানগরী ও আশপাশে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘন ঘন মৃত্যুর ঘটনার ব্যাপারে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ খিলক্ষেত এলাকা খুবই দুর্ঘটনাপ্রবণ। এর বড় কারণ, রেলপথের পাশেই অবৈধ দোকানপাটের জন্য ট্রেন দেখতে না পাওয়া। খিলক্ষেত থেকে কাওলা পর্যন্ত পাঁচটি ক্রসিংয়ের তিনটিই অবৈধ। কুড়িলে রয়েছে রেললাইনের বিপজ্জনক বাঁক। লাইনের পাশে ফাঁকা জায়গা না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। রেল পুলিশ জানায়, ঢাকার রেলপথে মৃত্যুর যত ঘটনা ঘটে, এর ৮০ শতাংশের মূল কারণ সতর্কতার অভাব; ১০ শতাংশের কারণ অসুস্থতা; ৫ শতাংশ ঘটনা আত্মহত্যার এবং বাকি ৫ শতাংশ ঘটছে হত্যা ও অন্যান্য কারণে।
একজন পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কেউ যানজটে পড়ে গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছতে রেললাইন ধরে হাঁটে; কেউ ফোনে কথা বলা কিংবা গান শোনার সময় আর কোনো দিকে খেয়াল করে না; অনেকে হর্ন শুনেও বুঝতে পারে না কোন লাইন ধরে ট্রেন ছুটে আসছে। এসব কারণেও মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ছে। শহরাঞ্চলে ভিন্ন তলে যদি রেললাইন স্থাপিত হয়, অর্থাৎ যদি রেলপথ ভূগর্ভস্থ কিংবা উড়াল হয়ে থাকে অথবা কাঁটাতার ধরনের প্রতিবন্ধক দিয়ে রেললাইনে প্রবেশ রোধ করা যায়, তাহলে রেলগাড়ির ধাক্কায় বা চাকায় মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু অনেকটা বন্ধ হবে বলে আশা করা যেতে পারে।
দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে দু-তিনজন রেললাইনে অপমৃত্যুর শিকার। এই বিপুল মানুষের শোচনীয় মৃত্যুরোধে প্রশাসনের কঠোরতা এবং জনগণের সচেতনতা অপরিহার্য। বিশেষ করে, মোবাইল ফোন ও হেডফোন ব্যবহারকারীদের সতর্ক হওয়া এবং সব অবৈধ ক্রসিং হয় বন্ধ নতুবা সেখানে প্রহরার ব্যবস্থা করা জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement
সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক

সকল