২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পুরান ঢাকায় আবারো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আবাসিক এলাকা থেকে কারখানা সরাতে হবে

-

পুরান ঢাকায় আবারো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না। তবে জানা যাচ্ছে, বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ উচ্চ রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ সহায়ক হয়েছে। রাস্তা, আশপাশের দোকানপাট এবং বাসাবাড়িতে অকস্মাৎ আগুনে পুড়ে মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম দুরূহ করে তুলেছে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা। তার ওপর ছিল আশপাশে পানির অভাব। প্রায় ১৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীর দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়া হয়নি। ওই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও ভবিষ্যতের জন্য করণীয় শনাক্ত করে ১৭টি সুপারিশ করা হলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।
এবারের অগ্নিকাণ্ডে প্রথমে গাড়িতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে। যানজটে আটকে থাকা অন্যান্য গাড়ি ও রিকশায় আগুন ধরে যায়। আশপাশে রাস্তার ওপর হোটেলে জ্বালানির জন্য রাখা সিলিন্ডারেও একই সময় বিস্ফোরণ ঘটে। পুরান ঢাকার ব্যস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে চুড়িহাট্টা অন্যতম। অগ্নিকাণ্ডের জায়গাটিতে পাঁচটি রাস্তা এসে মিশেছে। এর ওপর পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে রাস্তা বন্ধ থাকায় চুড়িহাট্টায় যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। মোড়ে রাসায়নিক পণ্যের গোডাউন, রেস্তোরাঁ, ফার্মেসি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দোকানপাট ছিল। আগুন লাগার শুরু থেকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এগুলো নিশ্চয়ই দাহ্য পদার্থ রাখার পাত্র। চুড়িহাট্টা জামে মসজিদ-সংলগ্ন আসগর লেন, নবকুমার দত্ত রোড ও হায়দার বক্স লেনের বসতবাড়ি পুড়েছে। বাড়ির মালিকেরা গুদাম ভাড়া দিতে আগ্রহী এ কারণে যে, বেশি টাকা পাওয়া যায়। এক হাজার বর্গফুটের একটি গুদাম ভাড়া দিলে অগ্রিম দশ লাখ টাকা পাওয়া যায়। সাথে মাসে ২৫ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। বেশি লাভের আশায় পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকগুলোতে মানুষ গুদাম ভাড়া দেয়। খবরে জানা যায়, ওই এলাকায় সম্প্রতি রাসায়নিক দ্রব্যের বড় চালান এসেছে। সুগন্ধির ওই চালান এসেছে চীন থেকে। এক দিন আগে ওই মোড়ে দাঁড়ালে সুগন্ধি নাকে আসছিল। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে থাকা কারখানায় ওই সব সুগন্ধি গুদামজাত করা হয়েছে। এবারের অগ্নিকাণ্ডের একটি বিশেষ দিক ছিল রাস্তায় যানবাহন পুড়ে মানুষ মারা যাওয়া। এমনকি মোটরবাইক পুড়ে গিয়ে মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
নিমতলী ট্র্যাজেডির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ১৭টি সুপারিশ করে। প্রথম সুপারিশটি ছিল জরুরি ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম বা কারখানা সরিয়ে নেয়া। এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এবার বরং রাসায়নিক গুদামের কারণে অগ্নিকাণ্ড ভয়াবহ রূপ পেতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় সুপারিশটি ছিল অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। আমরা দেখেছি এই সময়ে এসব এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম থেকে গেছে। নতুন করে আরো গুদাম এসব এলাকায় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ বেশি লাভ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের। সেই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে দ্রুত সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ছিল। স্থানীয় মেয়র দাবি করেছেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাধার কারণে গুদাম বা ব্যবসা সরানোর কাজটির অগ্রগতি হয়নি। আমরা মনে করি, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তা দরকার। তাদের দিতে হবে ক্ষতিপূরণ। এর সাথে আগের সুপারিশ বাস্তবায়নে যারা বাধা দিয়েছে তাদের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা দরকার। আবাসিক এলাকা থেকে দাহ্য পদার্থের কারখানা অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement