২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চট্টগ্রামে জীবন্ত অঙ্গার ৯ বস্তিবাসী

আগুনের কারণ দ্রুত উদঘাটন জরুরি

-

চট্টগ্রামের একটি বস্তিতে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে দুই পরিবারের সাত সদস্যসহ মোট ৯ জন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। বস্তিতে রাতে চোরের উৎপাত বেশি থাকায় দরজার ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে ঘুমাতেন অনেক বস্তিবাসী। আগুনের ধোঁয়ায় দিশেহারা হয়ে চাবি না পেয়ে তালা খুলতে পারেননি তারা। ভাঙতেও পারেননি। ফলে পুুড়ে অঙ্গার হতে হয় ৯ জনকে। জীবনের ক্ষতি ছাড়াও পুড়ে গেছে কমপক্ষে ২২৫টি ঘর। আগুনে হাজারো মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। শনিবার রাত সাড়ে ৩টায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ভেড়া মার্কেট বস্তিতে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনা এমন সময় ঘটল, যখন কর্ণফুলী নদীর তীর দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অবকাঠামো উচ্ছেদে প্রথম দফায় অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। দ্বিতীয়পর্যায়ে উচ্ছেদকার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে আর তৃতীয়পর্যায়ে উচ্ছেদের তালিকায় রয়েছে এই বস্তি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার বস্তিতে গিয়ে উচ্ছেদের বিষয়টি অবহিত করা হয়, বাসিন্দারা যাতে সেখান থেকে সরে যান। অনেক ভাড়াটে সরে যেতে চাইলেও বস্তি নিয়ন্ত্রণকারীদের লোকজন বাসা না ছাড়ার নির্দেশ দেয় বস্তিবাসীদের। ফলে তারা সরে যেতে চাইলেও যেতে পারেননি।
অভিযোগ উঠেছে, চলমান অভিযানে উচ্ছেদের তালিকায় থাকা বস্তিটিতে রাতে উদ্দেশ্যমূলক আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। নেপথ্যে কাজ করেছে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সুবিধাভোগীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। বস্তি উচ্ছেদ ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয় বলে অনেকের ধারণা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী খাস জমিতে এই বস্তিঘর গড়ে তুলে নি¤œবিত্ত শ্রেণীর কাছে ভাড়া দিয়ে জমজমাট বাণিজ্য করে আসছিল। বস্তিঘরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সম্প্রতি এলাকায় একাধিক পক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। অভিযোগ মতে, আধিপত্য বিস্তার করতে না পেরে কোনো একটি পক্ষ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আগুন কারা লাগিয়েছে তা কেউ নিশ্চিত না হলেও ওই রাতে বস্তিতে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা ছিল বলে জানা গেছে।
অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, দেশের অনেক বস্তিতেই মাঝে মধ্যে আগুন লাগার ঘটনার পেছনে বেশির ভাগ সময় আধিপত্য বিস্তার আর নিয়ন্ত্রণ কারা করবে তা হয়ে ওঠে মুখ্য বিষয়। এ জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়। এর অন্যতম কারণÑ প্রায় সব বস্তি গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে খাস জমিতে। বস্তি হচ্ছে একশ্রেণীর প্রভাবশালীর আয়ের অন্যতম উৎস। এই আয় আসে বস্তিঘর ভাড়া দিয়ে আর মাদক বিক্রি করে।
এ কথা সবার জানা, দেশের বেশির ভাগ বস্তি হচ্ছে অপরাধপ্রবণ জায়গা। একই সাথে মাদক কেনাবেচার স্থান। স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় তাদের অনুসারীরা বেশির ভাগ বস্তি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আন্তঃদলীয় কোন্দলে এ নিয়ে অনেক সময় ঘটতে দেখা যায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কারণ আর কিছু নয়, ভাগবাটোয়ারা। এ জন্য চট্টগ্রামে বস্তিতে আগুন লাগার পেছনে এসব কারণ বিদ্যমান থাকা অস্বাভাবিক নয়।
আমরা মনে করি, আগুন লাগার কারণ উদঘাটনে তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যের যে কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সেই কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন, স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য নিয়ে নিরপেক্ষভাবে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করবে; যাতে আগুন লাগার কারণ উদঘাটন হয়। কারণ, উদঘাটন যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়, এটি সবার চাওয়া। একই সাথে এই অগ্নিকাণ্ড সত্যি সত্যিই যদি পরিকল্পিত হয়, তাহলে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কোনোভাবেই যেন ছাড় না পায়। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা মানবিক দাবি বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement
পিরোজপুরে বাসের ধাক্কায় নদীতে ৪ মোটরসাইকেল ফরিদপুরে নিহতদের বাড়ি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী টিকটকে ভিডিও দেখে পুরস্কার, প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল