২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইয়াবা কারবারিদের ‘আত্মসমর্পণ সমঝোতা’

দরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স

-

মাদকবিরোধী অভিযান নতুন পর্বে উত্তরণ ঘটেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করছে ইয়াবা কারবারিদের একটি অংশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুুলিশ মহাপরিদর্শকের উপস্থিতিতে টেকনাফে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করে। মাদকের এই কারবারিরা ইয়াবা ট্যাবলেট ও অস্ত্র সমর্পণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। অপরাধীদের প্রতি ক্ষমার উদারতা দেখানো ইতিবাচক। তবে আত্মসমর্পণের যে সাজানো মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, সেটি নিয়ে মানুষের মনে দ্বিধা-সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অবৈধ সব ইয়াবা কারবারিকে ধরে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সরকার আন্তরিক; না এর মধ্যে কোনো ধরনের পছন্দের বিষয় রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা যে তালিকা, সেখানে টেকনাফের একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও তার স্বজনেরা রয়েছেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মসমর্পণ করলেও তিনি নিজে ছিলেন না।
খবরে জানা যায়, আত্মসমর্পণকারীরা দুই মাস ধরে সেফ হোমে ছিল। সেখান থেকে এনে তাদের মঞ্চের সামনে উপস্থিত করা হয়। এদের মধ্যে ৩০ জন ‘গডফাদার’, বাকি ৭২ জন ইয়াবা কারবারি। এ সময় তারা তিন লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৩০টি দেশীয় পিস্তল জমা দিয়েছে। অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দু’টি মামলায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইয়াবার চোরাচালান ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের তরুণদের বিরাট একটি অংশ এতে আসক্ত। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে ইয়াবার নেশা বিপুলভাবে বেড়ে গেছে। সারা দেশে ইয়াবা কারবারিদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। ইয়াবা গডফাদারও তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে শীর্ষস্থানীয় একজন গডফাদার হিসেবে পূর্বোক্ত সাবেক এমপির নাম উঠে আসে। স্বয়ং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য মাদক চোরাচালানের সাথে যুক্ত। মিয়ানমারের ইয়াবার ছোবলে বাংলাদেশ যেন নীল হয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হলো। এ সময় অভিযোগ ওঠে, কাউকে কাউকে ‘টার্গেট কিলিং’ করা হচ্ছে। টেকনাফে একজন স্থানীয় কাউন্সিলর হত্যার পর এ অভিযোগ আরো জোরালো হয়। যা হোক, মাদক ব্যবসা কিন্তু বন্ধ হয়নি। দেশব্যাপী এ সিন্ডিকেট ঝাঁকুনি খেলেও মূল গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এখন দেখা যাচ্ছে আত্মসমর্পণের নতুন অধ্যায়। সেখানে একজন গডফাদারের আত্মীয়দের সবাই আত্মসমর্পণ করলেও তিনি তা করেননি। এবার আত্মসমর্পণকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এর আগের মতো কঠোর অবস্থান নেয়নি প্রশাসন।
মূল কথা হচ্ছে, জাতিকে ইয়াবাসহ ভয়াবহ মাদকের ছোবল থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। তাই সব মাদকের গডফাদার ও কারবারিদের রুখতে হবে। এ জন্য সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি দরকার। তবে বিচারবহির্ভূত হত্যা সমর্থনযোগ্য নয়। আবার, কিছু কারবারিকে সমঝোতার মাধ্যমে বিচারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়াও সমাধান নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লড়াই করতে হবে পুরো মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। তাদের ধরা ও আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাত ও নমনীয়তা থাকতে পারবে না। ক্ষমা প্রয়োজনে করা যেতে পারে, সেই পথ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। কাউকে কৌশলে বাঁচিয়ে দেয়া আর কাউকে মাদকের সাথে জড়িত থাকার অজুহাত ব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটানো যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement