২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড

কারণ উদঘাটন জরুরি

-

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীরা মারাত্মক নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়েন। সদ্য অস্ত্রোপচার হওয়া রোগী, আইসিইউ ও সিসিইউতে থাকা জীবন আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন এমন রোগীদের অনেকটা টেনেহিঁচড়ে হাসপাতালের বাইরে আনতে হয়েছে। গুরুতর রোগীদের দ্রুত অন্যান্য হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলেও অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে একটি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরকারি হাসপাতালটিতে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ফ্লোরে। রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজন এবং হাসপাতালে থাকা ডাক্তার, নার্স ও অন্যদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালে মানুষ সুস্থতা অর্জনের জন্য যায়। সেখানে গিয়ে যদি উল্টো অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার বিপদে পড়তে হয় তা মানা যায় না। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি হাসপাতাল। এ হাসপাতালে এভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় হাসপাতালটিতে আগুন লাগে। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় শিশু ও গাইনি ওয়ার্ডের মাঝামাঝি রাখা আসবাব থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তৃতীয় তলা থেকে আগুন মুহূর্তের মধ্যে পুরো হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, নিচতলার স্টোররুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। আগুন লাগার পর হাসপাতালজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বের হওয়ার জন্য দিগি¦দিক ছোটাছুটি করেন। হাসপাতালে মানুষ সুস্থতার জন্য যায়। এ সময় মানুষের মনে এমনিতেই একধরনের শঙ্কা ও মানসিক দুর্বলতা থাকে। তার ওপর অগ্নিকাণ্ড তাদের জন্য বিপদের ওপর বিপদ হিসেবে আপতিত হয়। এই সময় দিগি¦দিক ছোটা কিংবা দিশা হারানো একটি সাধারণ ব্যাপার। হাসপাতালে এই সময় প্রায় ১২০০ রোগী ছিলেন। রোগীদের সবাই সময়মতো নিরাপদ জায়গায় নেমে আসতে পেরেছেন। এ দুর্ঘটনার মধ্যে কেউ নতুন করে আহত হননি, এটি একটি বড় ব্যাপার। গুরুতর রোগীদের অন্যান্য হাসপাতালে দ্রুত স্থানান্তর করা গেছে। কেউ কেউ চিকিৎসা নেয়ার পরিবর্তে বাসায় ফিরে গেছেন। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি টিম পর্যায়ক্রমে অগ্নিনির্বাপণে অংশ নেয়। আশপাশে সহজে পানি পাওয়া যাচ্ছিল না দেখে ফায়ার ব্রিগেড বেকায়দায় পড়ে। প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর সাড়ে ৮টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত সাড়ে ৯টায় আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়।
অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ফায়ার সার্ভিস এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আলাদা দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই ব্যাপারটি তলিয়ে দেখবেন। হাসপাতালের পুরনো অবকাঠামোর কারণে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড হয়েছে কি না। অথবা বৈদ্যুতিক গোলযোগ কিংবা কারো অবহেলার কারণে এমন অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পেরেছে কি না। বলা হচ্ছে, আসবাব থেকে আগুনের সূত্রপাত। অনেক সময় সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশ অসতর্কভাবে যেখানে সেখানে ফেলা হয়। সেখান থেকেও আগুনের সূচনা হতে পারে। নিরাপত্তাব্যবস্থায় কোথায় ত্রুটি রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। হাসপাতাল একটি বিশেষ এলাকা। এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে উন্নত। বিশেষ করে আগুন লাগা এবং তা ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সতর্ক প্রস্তুতি থাকার কথা। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে পানির দু®প্রাপ্যতা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আশপাশে পানির সংস্থান করা যাচ্ছিল না। ফলে অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম বিঘিœত হয়েছে। অতীব গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পানির সহজপ্রাপ্যতা নিয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement