ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি
- ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গ্রামীণ ক্ষুদ্রশিল্প খাতে (নন-ফার্ম রুরাল ক্রেডিট) বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ; যেখানে আগের বছরে একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ে এ খাতে বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল দুই হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৯ কোটি টাকায়। এই চিত্র খুবই আশঙ্কাজনক।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ব্যাংকের ঋণদান কার্যক্রম জাতীয়পর্যায়ে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ায় গ্রামীণ শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অবকাঠামোর অভাব ও চলমান পরিস্থিতির প্রভাব পল্লী এলাকায় পড়েছে। আলোচ্য সময়ে জাতীয়পর্যায়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ কেবল গ্রামীণ শিল্পেই নয়, জাতীয়পর্যায়েও বিনিয়োগে ভাটার টান ধরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামীণ শিল্পে বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়ে পড়ায় সঙ্কুচিত হয়ে আসছে কর্মসংস্থান। ব্যাংকাররা বলছেন, শহরের চেয়ে গ্রামে অবকাঠামোসুবিধা কম। বিদ্যুৎ বিতরণ কম। অনেক এলাকায় দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে গ্রামীণ বিনিয়োগে আগ্রহ কমছে বিনিয়োগকারীদের। ঋণখেলাপি হয়ে পড়া, পল্লী এলাকায় ভালো উদ্যোক্তার অভাব ইত্যাদি সমস্যার কথাও বলেছেন ব্যাংকাররা। গ্রামীণ এলাকার চেয়ে জাতীয়পর্যায়ে ঋণ বিতরণের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে ব্যাংকগুলোÑ এমন কথা বলেছেন কেউ কেউ। বলেছেন, ব্যাংকগুলোর তহবিল সঙ্কটের কথা। সুদহার কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আমানতপ্রবাহ কমেছে। সেই সাথে বিনিয়োগ থেকে আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগসক্ষমতাও কমছে। সব মিলে গ্রামীণ বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।
গ্রামীণ শিল্পকে এখন আর জাতীয়পর্যায়ের শিল্প থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। নানা ধরনের ক্ষুদ্রশিল্প গ্রামপর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। পোলট্রি, মৎস্য খামার, পশুপালন, ফুলের চাষ, চিংড়ি ঘের, মৌমাছির চাষ, তাঁত, নকশি কাঁথাÑ এ ধরনের ক্ষুদ্র শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে গ্রামীণ জনপদের লাখো মানুষ। গত ১০ বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণদানের নামে ব্যাংক লুটের যে অপসংস্কৃতি হরদম কায়েম করা হয়েছে, সে কারণেই ঋণখেলাপি বেড়েছে। ব্যাংকগুলোতে দেখা দিয়েছে তহবিল ঘাটতি। অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় ব্যাংক টিকিয়ে রাখার সরকারি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আরেকটি মন্দ নজির সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই সাথে আছে ভয়াবহ চাঁদাবাজি। বিপুল চাঁদা দিয়ে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের পক্ষে প্রতিষ্ঠান চালু রাখা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। এতে প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। অনেক উদ্যোক্তা পথে বসেন। শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েন।
দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বেকারের সংখ্যার যে উপাত্ত প্রকাশ করেছে, তার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত বেকারের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। এর কারণ, মূলত শিল্প খাতকে স্বাভাবিকভাবে এগোতে না দেয়া। ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ পেতে কিভাবে কৃষককে এর বিরাট অংশ ঘুষ হিসেবে দিতে হয়. সেই তথ্যও এর আগে গণমাধ্যমে এসেছে।
সব মিলিয়ে দেশে শিল্পের বিকাশ অবাধ নয়। গ্রামীণ শিল্পে বিনিয়োগ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে এবং তা হচ্ছেও। এর ফলে পল্লী অঞ্চলে কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং বেকার মানুষ পেটের তাগিদে শহরমুখী হচ্ছে। ফলে শহরের ওপর চাপ বাড়ছে।
গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা না হলে বেকারত্ব আরো বাড়বে। পরিস্থিতির উন্নয়নে এখনই ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বাড়ানো দরকার। এর একমাত্র সমাধান হলো, সাবেক অর্থমন্ত্রীর আমলে ব্যাংকিং খাতে যেসব অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেগুলোর অপনোদন; সুশাসন ফিরিয়ে আনা। নতুন সরকার ও নতুন অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে জাতীয় অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশের সহায়ক হিসেবে কার্যকর করে তুলবেন, এটাই এই মুহূর্তে জাতির প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা