১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হজের ব্যয় বৃদ্ধি

সহনীয় মাত্রায় রাখতে হবে

-

সামর্থ্যবান সব মুসলিমের জন্য পবিত্র হজ অবশ্যপালনীয় একটি কর্তব্য। এটি আল্লাহর বিধান। আল্লাহ পবিত্র কাবাঘরকে রুকুকারী, সিজদাকারী ও তাওয়াফকারীদের জন্য সব পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে ইব্রাহিম আ:কে নির্দেশ দেন। একই সাথে আল্লাহতে বিশ্বাসীদের প্রতি আহ্বান জানাতে বলেন পবিত্র হজ পালনের। সেই থেকে সঙ্গতিসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হজ বাধ্যতামূলক একটি ইবাদত। তাই দুনিয়ার সব প্রান্ত থেকে পবিত্র কাবা তাওয়াফে প্রতি বছর হজে অংশ নেন লাখ লাখ মুসলিম নরনারী। এটি মুসলিম উম্মাহর একমাত্র সম্মিলন।
বিশ্বের একটি বৃহৎ মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকেও হজ পালনে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম অংশ নেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ১০ আগস্ট পবিত্র হজ হতে পারে। চলতি বছর আমাদের দেশ থেকে হজে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। তবে বিমানভাড়া কমলেও সব মিলিয়ে এ বছর হজে যাওয়ার খরচ গতবারের চেয়ে বেড়েছে। প্যাকেজ-ভেদে হজে যাওয়ার খরচ সর্Ÿোচ্চ ২০ হাজার ৫৭১ টাকা বেড়েছে।
তেজগাঁওয়ে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে হজ প্যাকেজ ২০১৯ অনুমোদন করা হয়। একই সাথে জাতীয় হজ এবং ওমরা নীতি (সংশোধিত) ২০১৯-এর খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্যাকেজ অনুযায়ী, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য দুই ধরনের খরচের হিসাব রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ ১-এর আওতায় সব মিলিয়ে খরচ পড়বে চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। গত বছরের চেয়ে ২০ হাজার ৫৭১ টাকা বেড়েছে এবার। প্যাকেজ ২-এর অধীনে খরচ পড়বে সব মিলিয়ে তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এ প্যাকেজে গতবারের চেয়ে ১২ হাজার ৬৪১ টাকা বেড়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে খরচ তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকার নিচে হবে না। এবার বিমানভাড়া ঠিক করা হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে হজ প্যাকেজের অনুমোদন দেয়ার পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
বাংলাদেশ থেকে এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন এক লাখ ২০ হাজার। কাবা শরিফ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে যাদের ভাড়াবাড়িতে রাখা হবে, তারা প্যাকেজ ১-এর আওতায় থাকবেন। বাসা থেকে তারা যাতায়াত করবেন ট্রেনে। প্যাকেজ ২-এর আওতায় যারা থাকবেন, তারা কাবা শরিফ থেকে দুই কিলোমিটার দূরে থাকবেন। তারা যাতায়াত করবেন বাসে। ট্রেন ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধিতে এবার হজে যেতে খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া, কোরবানির ব্যয়ও বেড়েছে।
বিশ্বব্যাপী সব কিছু বাণিজ্যিকীকরণ হওয়ায় হজের মতো ধর্মীয় একটি অবশ্যকরণীয় বিধান পালনেও আমাদের দেশে ধর্মপ্রাণ অনেকে দুর্ভোগ পোহান; গণমাধ্যমে হরহামেশা এমন খবর দেখা যায়। এটি সত্যিই দুঃখজনক ও পীড়াদায়ক। ধর্মীয় একটি বিধান পালনে এমন বিপত্তি কারো কাম্য নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে যারা হজ করতে যান, তাদের অনেকে কিছু হজ এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে থাকেন। প্রতি বছরই এমন ঘটনা ঘটে। এবার যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। হজ ব্যবস্থাপনার সাথে বেসরকারিভাবে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাদের অনেকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি এর জন্য দায়ী। বিষয়টি সরকারকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
অন্য দিকে সৌদি আরবে পবিত্র কাবা অবস্থিত হওয়ায় পুরো হজ ব্যবস্থাপনা সৌদি সরকার করে থাকে। সৌদি আরবের সাথে জড়িত হজ পালনে যেসব আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থাপনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি না তা কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করা যেতে পারে। সব দিক থেকে হজ পালনে কিছুটা ব্যয় সাশ্রয় হলে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের দেশের মানুষ এই বিধান পালনে আরো বেশি করে অংশ নিতে পারবেন। হজের মতো একটি বিধান পালনে ব্যয় বৃদ্ধি কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখা দরকার। তাই সরকারকে দেশে এবং সৌদি আরবের সাথে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সহনীয় মাত্রায় হজযাত্রার ব্যয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement