১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রোগের টিকা এবার দেশে তৈরির উদ্যোগ

৮৪ হাজার কোটি টাকা অপচয়!

-

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যানথ্রাক্স, পিপিআর প্রভৃতি রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে বিস্তার লাভকারী এসব ব্যাধির প্রতিরোধে প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করতে হয় টিকা আমদানির জন্য। এক হিসাবে জানা যায়, বিশেষত গত ২৮ বছরে এই টিকা আমদানি করতে হয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকার। এই টাকা ‘পানিতে ঢালা হয়েছে’ বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। কারণ, খোদ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেছেন, আমদানিকৃত এই টিকা কোনো কাজে আসেনি। প্রাণীর কয়েকটি রোগের ক্ষেত্রে এসব টিকা ব্যবহারের পরও দেশে এসব রোগের আবার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এ অবস্থায় বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। অন্য দিকে প্রাণিসম্পদ ব্যাপকভাবে হচ্ছে ক্ষতির শিকার।
একটি জাতীয় দৈনিক এ বিষয়ে প্রকাশিত লিড নিউজে জানিয়েছে, এত দিনে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের ‘বোধোদয়’ ঘটেছে। মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা এখন বলছেন, দেশেই যদি বায়োসেফটি লেভেল ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে আর বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রাণীর টিকা আনতে হবে না। এ লক্ষ্যে সাভারে এসব টিকার মান নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে প্রাণী গবেষণাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এ দিকে, গত বৃহস্পতিবার নতুন জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী পোলট্রির মুরগি থেকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিগত আশির দশকে দেশে পোলট্রি শিল্প বিকাশের সময় থেকে টিকা আমদানি বৃদ্ধি পায়। প্রধানত ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে এটি আমদানি করা হয়। যেমনÑ রাশিয়া, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়া। ঢাকার মহাখালীতে যে ল্যাব রয়েছে, সেখান থেকে এই টিকার চাহিদার মাত্র এক-চতুর্থাংশ পূরণ করা যায়। এ জন্য বড় আকারে গবেষণাগার স্থাপন হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ১৬৪ কোটি টাকা। তদুপরি, বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যাতে তারাও এ ভ্যাকসিন বা টিকা উৎপাদন করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতেÑ মানুষ ও প্রাণীর আদান-প্রদানে বিস্তার লাভকারী রোগের মধ্যে আছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, খুরা রোগ, সোয়াইন ফ্লু, অ্যানথ্রাক্স, পিপিআর, সেপ্টিসেমিয়া প্রভৃতি। এগুলোর প্রতিরোধে বিপুল অর্থব্যয়ে টিকা আমদানি করা হচ্ছে কয়েক দশক। এগুলো বাংলাদেশের বাস্তবতার ভিত্তিতে নয়, বরং উৎপাদনকারী দেশের পরিস্থিতির নিরিখে তৈরি করা হয়। তা ছাড়া, আমদানিকৃত টিকার মান যাচাই করার উপযোগী গবেষণাগার নেই বাংলাদেশে।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, উল্লিখিত টিকা যে ফলপ্রসূ হচ্ছে না তা বুঝতে আমাদের বিশেষজ্ঞদের ২৮ বছরের মতো দীর্ঘ সময় কেন লেগে গেল? এ সময়ে যে ৮৪ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে, গরিব দেশের জনগণের সে অর্থের অপচয়ের দায় কে নেবে? রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বিপুল অর্থ এভাবেই অপচয়, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেখা যায়, বড় বড় প্রকল্প নেয়া হলেও তার সুফল দেশের মানুষ তেমন পায় না।
আমরা আশা করি, অর্থের আর অপচয় না করে যত শিগগির সম্ভব, দেশেই উৎপাদন করা হবে উল্লিখিত টিকা। এতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটবে এবং আমাদের প্রাণিসম্পদ রক্ষা পাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement