২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাড়ছে বেকারত্ব

কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

-

বাংলাদেশে চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বেকারের তালিকায় প্রতি বছর নতুন করে যোগ হচ্ছে আট লাখ কর্মক্ষম মানুষ। গত রোববার প্রকাশিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। ‘কাক্সিক্ষত সামাজিক উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি : সমস্যা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কয়েক বছর দেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও সে তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তা ছাড়া, প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে ধনী ও গরিবের মধ্যে মারাত্মক আয়বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি করা, সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতি বছর ২১ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু বছরে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে ১৩ লাখের মতো। ফলে প্রতি বছর আট লাখ কর্মক্ষম মানুষ কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে যেসব তথ্য উঠে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সিপিডির দেয়া তথ্যের চেয়েও প্রকৃত পরিস্থিতি আরো নাজুক। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের বরাত দিয়ে একটি দৈনিকের রিপোর্টে জানানো হয়, দেশে গত ১৫ বছরে কাজ পেয়েছে মোট এক কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। ওই ১৫ বছরে প্রতি বছর গড়ে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখের কম (৯ লাখ ৬৬ হাজার)। আর ২০১৩-২০১৭ সালে কর্মসংস্থানের হার নেমে গিয়েছিল পৌনে সাত লাখে।
এরই মধ্যে দেশের শ্রমঘন শিল্প, তৈরী পোশাক খাতের বিকাশ অনেকটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অবস্থাও আশাব্যঞ্জক নয়; বরং অনেক দেশের শ্রমবাজার বাংলাদেশীদের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এ অবস্থায় নতুন কোনো শ্রমঘন শিল্প বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সিপিডির অনুষ্ঠানে অর্থনীতির জন্য দু’টি দুশ্চিন্তার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো প্রবৃদ্ধির তুলনায় কর্মসংস্থান আশানুরূপ না হওয়া এবং প্রবৃদ্ধির সুফল থেকে সাধারণ মানুষের উপকৃত না হওয়া। অনুষ্ঠানে বক্তারা সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন। ধনী ও দরিদ্রের আয়বৈষম্যের উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রবৃদ্ধির সুবিধা সমানভাবে বিতরণ না হওয়ায় বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন।
সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কী? নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তরুণদের প্রাধান্য দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের মধ্যে তারা দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন। তার মানে হলো, সরকারকে বছরে অন্তত ৩০ লাখ চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যেখানে গত ১৫ বছরে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টির সংখ্যা বছরে পৌনে সাত লাখ থেকে শুরু করে ১০ লাখের ওপরে ওঠেনি, সেখানে সরকার হঠাৎ কোন জাদুর বলে বছরে ৩০ লাখ কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবে, তা বোধগম্য নয়। বাস্তবতা ও প্রতিশ্রুতির মধ্যে এই আকাশ-পাতাল ব্যবধানের বিষয়টি মাথায় রেখেই সম্ভবত সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান বলেছেন, একসময় বলা হতো ‘দারিদ্র্যকে মিউজিয়ামে পাঠানো হবে’, কিন্তু এখন আর সেটি বলা যাচ্ছে না। আর সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দিয়ে পূর্ব এশিয়ার তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, চীনের মতো দেশগুলো এগিয়ে গেছে। আমাদের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও মানসম্পন্ন শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি লোক বেকার বা ছদ্মবেকার। এদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হলে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; শ্রমঘন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। অর্থনীতির মেরুদণ্ড শক্ত না হলে শুধু ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল বা পাতাল রেলের মতো উন্নয়নের দৃশ্যমান নমুনা খাড়া করে অর্থনীতির অবনয়ন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। সরকারের শীর্ষ কুশীলবেরা যত তাড়াতাড়ি এই সত্য উপলব্ধি করবেন, জাতির জন্য ততই মঙ্গল।


আরো সংবাদ



premium cement