২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গরুর দুধে ক্ষতিকর উপাদান

জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন হুমকি

-

মানুষের শরীরের জন্য দুধ উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন অতি প্রয়োজনীয় একটি পানীয়। আর শিশুদের জন্য অপরিহার্য খাবার। শিশু বয়সে যথাযথ শরীর গঠনে দুধের বিকল্প নেই। তাই ছয় মাস বয়স পর্যন্ত সব শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বাধ্যতামূলক বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। দেশে গরু-ছাগলের দুধ সব বয়সী মানুষ পান করে থাকেন। এ ছাড়া, দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় নানা ধরনের মিষ্টিজাতীয় খাবার। আমাদের বেশির ভাগ চাহিদা মেটে গরুর দুধে। সেই গরুর দুধে এবার মিলেছে মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদান।
প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া গরুর দুধে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন অণুজীবও। একই সাথে মোড়কজাত গরুর দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়া গেছে অতিরিক্ত মাত্রায়। বাদ পড়েনি দইও। দুগ্ধজাত এ পণ্যেও মিলেছে সিসা। একই সাথে প্রায় সব গোখাদ্যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কীটনাশকও মিলেছে কোনো কোনো খাবারে। সিসা ও ক্রোমিয়ামও আছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল) বা জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে এসব ফলাফল উঠে এসেছে। নয়া দিগন্তসহ দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে গতকাল এনএফএসএলের প্রতিবেদনটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
এনএফএসএল সূত্র জানায়, গরুর দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দেশের ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গরুর দুধ ও গোখাদ্য সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়। দই ঢাকা শহরের দোকান ও আশপাশের উপজেলার দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়। সুপার স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হয় বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের মোড়কজাত তরল দুধ ও আমদানি করা প্যাকেট দুধ। এগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে ল্যাবরেটরিতে পৌঁছানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয়ের চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা পাওয়া যায়। ৯৬ শতাংশ দুধে মেলে বিভিন্ন অণুজীব। প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে আছে টেট্রাসাইক্লিন। একটি নমুনায় সিসা মিলেছে। একই সাথে ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন অণুজীব পাওয়া গেছে। দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়া গেছে। ৫১ শতাংশ নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন অণুজীব। সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়ার অর্থ হলো এগুলো যেকোনো বয়সী মানুষের শরীরে ঢুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
গরুর দুধ ও মোড়কজাত দুধে সিসা ও ক্রোমিয়াম পাওয়া ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এগুলো মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব দ্রব্য মানবশরীরে প্রবেশের চূড়ান্ত পরিণতি ক্যান্সার। কিডনির কাজ হলো মানবশরীরের নানা দ্রব্য ছেঁকে ফেলে দেয়া। কিন্তু এসব দ্রব্য ছেঁকে ফেলতে পারে না। শরীরে জমা হয়। তখন মারাত্মক পরিণতি অনিবার্য। দুধ ফোটানোর পর কিছু অণুজীব নষ্ট হতে পারে, কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক ও কীটনাশক বা সিসা নষ্ট হয় না।
মাঠপর্যায়ে জনস্বাস্থ্য দেখাশোনা যে মোটেও ভালোভাবে হচ্ছে না, এই প্রতিবেদন এর একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আগে স্যানেটারি পরিদর্শকেরা গরুর দুধে পানি মেশানো হয়েছে কি না তা দেখতেন। এখন তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে এসব ভয়াবহ উপাদান শনাক্তের কাজে। একই সাথে জনগণকে সচেতন করতে হবে এর মোকাবেলায়। তা না হলে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং তা জাতীয় জীবনে বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ পরিণতি। তাই দেশের খাদ্য নিরাপদ রাখার কার্যক্রমে স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ, খাদ্যসহ যেসব মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রয়েছে; তাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। যথাসম্ভব দ্রুত এই সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement