১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
খাবার লবণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে শিল্প লবণ

স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি আমলে নিতে হবে

-

একটি সহযোগী দৈনিক খবর দিয়েছে, কারখানায় ব্যবহারের জন্য আমদানি করা শিল্প লবণকে খাবার লবণ হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। শিল্প লবণকে সাধারণ খাবার লবণের সাথে মিশিয়ে তারা এটি করছে। এতে করে সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে এসব লবণ। ভোক্তার অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে ক্ষতিকর লবণ বিক্রি করে একটি অসাধু সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ। সিন্ডিকেটের এমন কারসাজিতে দেশে উৎপাদিত লবণের বিক্রি কমে যাচ্ছে। ভরা মওসুমেও নারায়ণগঞ্জের লবণ মিলগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আয় কমে গেছে লবণ শ্রমিকদের। এ ধরনের অসাধু কর্মকাণ্ড কেবল বাংলাদেশে সম্ভব। খাবারের মধ্যে অবলীলায় ক্ষতিকর পদার্থ মিশিয়ে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে চললেও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
খবরের বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়, শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত লবণ দেখতে রিফাইন করা খাবার লবণের মতো সাদা। আমদানি করার পর বস্তা খুলে ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করা সহজ। দেশী লবণ চাষ করার পর এটির রঙ থাকে লালচে। লবণ মিলে এটি রিফাইন করার পর রঙ সাদা হয়। রিফাইন করতে হয় না বলে খুচরা বাজারে খাবার লবণের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা কমে বিক্রি করা যায় শিল্প লবণ। এই সুযোগটি নিচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট। সাধারণভাবে খুচরা বিক্রেতারা অধিক লাভের লোভে এই লবণ বিক্রি করতে চাইবে। অন্য দিকে, ক্রেতারা কম দাম দেখে এর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। দাম কম হওয়ায় এ লবণ ইতোমধ্যে বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই লবণ সাধারণত জামালপুর, দিনাজপুর, রংপুরসহ মফস্বলের প্রত্যন্ত এলাকায় সরবরাহ করা হয়। প্যাকেটজাত অবস্থায় অনেক সময় খোলা বাজারে এই লবণ বিক্রি হয়। শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা এই লবণ মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। এই লবণ খেলে মানবদেহে কিডনি, লিভারসহ নানা অঙ্গে জটিল রোগ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।
শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে আনা লবণ যে খাবার লবণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ভোজ্য লবণের চাহিদা ১৬ থেকে ১৭ লাখ টন, শিল্প লবণের চাহিদা তিন লাখ ৮৩ হাজার টন। কিন্তু গত অর্থবছর দেশে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৭৫৮ টন লবণ আমদানি হয়েছে। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে প্রায় চারগুণ বেশি শিল্পে ব্যবহারের লবণ আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড আট লাখ ৯০ হাজার ১৮০ টন, হোয়াইট সোডিয়াম সালফেট পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৮৪ টন ও সোডিয়াম সালফেটস ২৬ হাজার ৫৩০ টন আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্প লবণের আমদানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চাহিদার দ্বিগুণের বেশি আমদানি হওয়া শিল্প লবণ খোলাবাজারে ভোজ্য লবণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারদর অপেক্ষা স্থানীয় বাজারে অপরিশোধিত লবণের মূল্য বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সোডিয়াম সালফেটের নামে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে তার সাথে সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার ও গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা সোডিয়াম ক্লোরাইড মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করছে।
লবণ নিত্য খাবারের অনিবার্য অনুষঙ্গ। এই পদটি ছাড়া মানুষের চলে না। ভেজাল লবণ দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই ভেজাল রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে এর সংরক্ষণে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল