২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রসঙ্গ

অব্যবস্থাপনার কারণে আসন শূন্য

-

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ মেলা সোনার হরিণ পাওয়ার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি আসনের বিপরীতে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করেছেন। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগীর সংখ্যা আরো বেশি। ২০১৮ সালে সাড়ে আট লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছেন। অপর দিকে, উচ্চশিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৫০ হাজারের কাছাকাছি। এতে করে ভালোভাবে পাস করা শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান না। ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষে দেখা যায়, অনেক আসন শূন্য থেকে যাচ্ছে। শূন্য আসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ের বহর কমছে না। অর্থাৎ, চলছে এক দিকে সরকারি অর্থের অপচয়, অন্য দিকে আগ্রহী ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যোগ্য বঞ্চনাবোধ সৃষ্টি হচ্ছে।
নয়া দিগন্ত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে ২০১৭ সালে ৯৬৩টি আসন ছিল শূন্য। ২০১৬ সালে শূন্য আসনের সংখ্যা ছিল ৯৩১। আসন শূন্য হচ্ছে মাস্টার্স পর্যায়ে এর দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৭ সালে স্নাতক প্রথম বর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি, ৪৬১টি আসন শূন্য ছিল, এরপর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান; সেখানে ২০৪টি আসন শূন্য থাকে। প্রায় প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে অনেকগুলো আসন শূন্য থেকে যাচ্ছে। হিসাবে দেখা যায়Ñ স্নাতকে আরো প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতেন। একই বছর দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মাস্টার্সে আসন ছিল ৩৫ হাজার পাঁচটি। শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন ৩২ হাজার ৭২৩ জন। ফলে খালি পড়ে থাকছে দুই হাজারের বেশি আসন। উপযুক্ত শিক্ষার্থী না থাকার কারণে আসন ফাঁকা থাকছে না। অবশ্য কেউ কেউ আছেন যারা কাক্সিক্ষত বিষয় পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ ছাত্র কোনো বিষয়ই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার অনেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ করে নেন। তারা এক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। পরে শূন্য আসনটি পূর্ণ করার সুযোগ থাকে না। অনেকে এক বছর পড়ার পর অন্য কোথাও সুযোগ পেয়ে যান। এতে ওই বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনটি শূন্য পড়ে থাকে।
একেকটি আসনের বিপরীতে সরকারের কত টাকা খরচ হয়Ñ সেটা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। একজন শিক্ষার্থী মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে সরকারি কোষাগার থেকে নিশ্চয়ই বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হয়। অন্য দিকে, এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, মেধা থাকার পরও অর্থের সংস্থান করতে না পারায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ বঞ্চনা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে অভিন্ন নিয়ম থাকা উচিত; যে পদ্ধতিতে মেধা ও পছন্দের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ পাবেন। পদ্ধতিটি এমন হবে, একজন শিক্ষার্থী চলে গেলে নিয়ম অনুযায়ী আসনটি পরের প্রতিযোগী পাবেন। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়ম যথাযথ সংস্কার হওয়া দরকার, যাতে করে কেউ বঞ্চিত না হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসনেরও যেন অপচয় না হয়। কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বের সাথে এ নিয়ে ভাবতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল