২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
  চুনোপুঁটি নিয়ে ব্যস্ত দুদক

বড় দুর্নীতির ব্যাপারে আগ্রহ নেই

-

বিশ্বের দুর্নীতিপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম কাতারে রয়েছে। সরকারের বড় বড় বিভাগ দুর্নীতিচর্চায় একে অন্যের সাথে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছে। বর্তমান সরকারের প্রথম দুই মেয়াদে দুর্নীতির বিরাট খাত হিসেবে দেখা গেল ব্যাংকগুলোকে। এই খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হতে দেখা গেছে। একটি দুর্নীতির পর আরেকটি দুর্নীতি সবার চোখের সামনে সংঘটিত হয়েছে। এর পাশাপাশি ছিল আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বাড়াবাড়ি। এই বাহিনী দেশের মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে নিজেরা অনেকের জীবন কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আগের মতো সব বিভাগে দুর্নীতি চলছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে, কমেছে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। দুর্ভাগ্য হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নামে একটি ক্ষমতাধর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে; কিন্তু বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই কমিশন কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে এমন দেখা যায়নি। এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে দুদকের কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে।
শিক্ষকদের কোচিংবাণিজ্য বন্ধে দায়ের করা কয়েকটি রিটের রায়ের আগে বিচারকেরা মন্তব্য করেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকেরা স্কুলে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না তা নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত মন্তব্য করেন, দুর্নীতির সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালদের ধরে এনে ছেড়ে দিয়ে শুধু স্কুলশিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। আদালত বলেন, ছোট দুর্নীতির আগে বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তবেই দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে। শিক্ষকদের কোচিংবাণিজ্য বন্ধে দায়ের করা কয়েকটি রিট মামলায় দুদকও একটি পক্ষ ছিল। তাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন দুদকের আইনজীবী। কয়েকটি সরকারি প্রাইমারি স্কুল দুদক চেয়ারম্যান হঠাৎ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি দেখতে পান কিছু শিক্ষক সময় মতো স্কুলে উপস্থিত নেই। তার পরিদর্শনের কারণে ব্যাপারটি আলোচনায় আসে এবং শিক্ষকদের স্কুলে উপস্থিত না পাওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়। দুদকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করতেও দেখা গেল। দুর্নীতি যেখানে রয়েছে দুদক সেখানেই যাবে। তাদের কাজ হচ্ছে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা। সে জন্য দুদকের একটি অগ্রাধিকার তালিকা থাকবে। যেসব দুর্নীতি সবার চোখের সামনে দিবালোকে সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোকে আগে ধরতে হবে। আদালত যেমন বললেন, ‘ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে’। যে বিভাগের দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সেগুলোকে আগে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা, বিচার, ব্যাংক ও ভূমি ব্যবস্থাপনার মতো বিভাগুলোকে অবশ্যই আগে দেখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের দুর্নীতি রয়েছে, সেগুলোতে দুদকের নজর থাকতে হবে।
আমরা দেখেছি, দুদক বিরোধী নেতাদের নিয়ে বেশ উৎসাহ বোধ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এমন একসময় তাদের বিরুদ্ধে দুদক বেশ সোচ্চার হয়েছিল, যখন তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। বরং সরকারের নিপীড়নের চোটে বিরোধী নেতারা দিশেহারা ছিলেন। একই সময় সরকারি দলের নেতাদের ‘চারিত্রিক’ সনদ দিতেও দেখা গেছে তাদের। দুর্নীতি নির্মূলে দুদক যদি সত্যিই আন্তরিক হয় তাহলে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। আদালত যে মত দিয়েছেন, সম্ভবত দেশের বেশির ভাগ মানুষ দুদকের ব্যাপারে একই রকম মনে করে।


আরো সংবাদ



premium cement