২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রাখাইন বৌদ্ধদের অনুপ্রবেশ

রোহিঙ্গা সমস্যার নতুন মাত্রা

-

রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেও মিয়ানমার সরকার রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি বলে তাদের এখনো ফেরত পাঠানো যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত দিয়ে ফের দলে দলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছে দেশটির অনেক নাগরিক। গত কয়েক দিনে কয়েক শ’ ব্যক্তি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এরা সবাই বৌদ্ধ ও উপজাতি সম্প্রদায়ের। তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। রাখাইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ‘আরাকান আর্মি’র সাথে সে দেশের সামরিক বাহিনীর ‘যুদ্ধাবস্থার’ কারণে জীবন বাঁচাতে দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে তারা। নতুন করে এ অনুপ্রবেশের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা আরো জটিল হয়ে উঠবে বলে সবার আশঙ্কা। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার এবং ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত অভিনেত্রী আঞ্জেলিনা জোলির বাংলাদেশ সফরের সময় এ অনুপ্রবেশ রোহিঙ্গা সঙ্কটে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করল। এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বান্দরবান সীমান্তের প্রায় ২৫ কিলোমিটার অরক্ষিত পথ দিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকেরা বাংলাদেশে ঢুকছে। কেবল রুমা উপজেলা দিয়েই কয়েক দিনে দুই শতাধিক উপজাতীয় লোক সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকেছে। তারা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোক। আর কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে রাখাইন প্রদেশের বৌদ্ধরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তীব্র প্রতিবাদ ও সতর্ক করেছে ঢাকা।
বান্দরবানের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে বেশ কয়েকটি পরিবার রুমা সীমান্ত পার হয়ে চইখ্যং বমপাড়ায় ঢুকেছে। এমন ৩৫টি পরিবারের একটি তালিকাও করা হয়েছে। গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তাদের খাবারের জোগান দিচ্ছে। একটি উপজাতীয় গ্রুপের ১২৪ জন সদস্য গত দুই দিন পাহাড়ে অবস্থানের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর পর তারা খাদ্যসঙ্কটে পড়েছে। দুর্গম সীমান্ত হওয়ায় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বিজিবির কোনো অবস্থান নেই। ফলে সহজেই তারা এ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে পারছে।
মিয়ানমার থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং উপজাতীয় ম্রো, বোম, রাখাইন ও খুমি সম্প্রদায়ের লোকজন পার্বত্য এলাকায় অনুপ্রবেশ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, বহু বছর আগে ঠিক এভাবেই বাংলাদেশে এসেছিল চাকমা, মারমা, বোম, মুরং ও রাখাইনরা। এ দেশে মিয়ানমারের নাগরিকদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে কথিত জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবি শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইনে নির্বিচারে গণহত্যা ও নির্যাতন চালায়। এতে মিয়ানমার থেকে কমপক্ষে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আগেও বিভিন্ন সময়ে আরো চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতায় কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় তাদের জন্য আশ্রয়শিবির খোলা হয়েছে।
বিশ্বের অষ্টম জনসংখ্যার ক্ষুদ্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রয়েছে আকণ্ঠ সমস্যা। ওই সব সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের পক্ষে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়া দুঃসাধ্য একটি কাজ। তবুও মানবিক দিক বিবেচনায় নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা আর কাউকে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল না। যদি রাখাইন রাজ্য থেকে মিয়ানমারের আরো নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে তাহলে বিরাট মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তখন ওই সমস্যা সামাল দেয়া হয়ে উঠবে প্রায় অসাধ্য।
রাখাইনের উল্লিখিত লোকজনের অনুপ্রবেশ রোধে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে বাংলাদেশকে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার বিকল্প নেই। বিষয়টির সমাধানে দ্বিপক্ষীয় পথে না হেঁটে বহু পক্ষকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। এ জন্য জাতিসঙ্ঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নৈশ প্রহরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ৬ দাবিতে উত্তাল বুয়েট, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন মোরেলগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১

সকল