২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পাট ও চামড়ার রফতানি আয় কমেছে

প্রবৃদ্ধির সাথে ঐতিহ্য অক্ষুণœ রাখতে হবে

-

চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) প্রথমার্ধে দেশের রফতানি আয়ে ‘ব্যাপক প্রবৃদ্ধি’ ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে। তবে এর পাশাপাশি কমে গেছে পাট ও চামড়াÑএ দু’টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যবাবদ আয়। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে, অর্থাৎ গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। উন্নতজাতের সোনালি আঁশ, পাটের জন্য বিশ্বে সুপরিচিত ছিল বর্তমান বাংলাদেশ। এবার সেই পাট ও পাটজাত পণ্যবাবদ রফতানি আয়ও হ্রাস পেয়েছে। এর পরিমাণ অনেকÑ প্রায় ২৭ শতাংশ।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত হলোÑ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পোশাক খাতের বাইরে রফতানির বড় ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেয়া যায় চামড়া শিল্পকে। এ ছাড়া, পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে নানান পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কয়েক বছর ধরে। তাই এ দুই খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধির বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আগের বছরের ছয় মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে দেশের রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে। অথচ চামড়াপণ্যের রফতানির বেলায় উল্টো ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ আয় কমে গেছে এবং পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে রফতানি আয় হ্রাসের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের শেষার্ধে চামড়া ও চর্মজাত পণ্য রফতানি আয়ের পরিমাণ ৬২ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে একই সময়ে তা কমে হয়েছে ৫৩ কোটি ২৩ লাখ ডলার। চামড়া সরাসরি রফতানির ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে ৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার আয় হলেও ২০১৮-১৯ সালের একই সময়ে তা কমেছে ৭০ লাখ ডলার। একই সময়ে চামড়াপণ্য রফতানি হয়েছে ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের। আগের বছর এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছিল ২১ কোটি ৫২ লাখ ডলারের। অর্থাৎ ওই ছয় মাসে চামড়াজাত পণ্যের রফতানি প্রায় অর্ধেক (৪৬ শতাংশ) হ্রাস পেয়েছে। আবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি থেকে অর্জিত হয়েছে ৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ের টার্গেট ছিল ৫২ কোটি ২৬ লাখ ডলার। তা থেকে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম আয় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ছয় কোটি ৫৪ লাখ ডলারের কাঁচা পাট রফতানি হয়েছে। আগের বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে, পাটের সুতা রফতানির আয় মাত্র এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা প্রায় ২৯ শতাংশ। পাটের ব্যাগ রফতানিও কমে যাওয়ায় আয়ের পরিমাণ এক বছরে ৪০ শতাংশ কমে চার কোটি ৯৩ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রফতানি খাতের মধ্যে প্রথমেই নাম আসে পাট ও পাটজাত পণ্যের। এরপরই চা ও চামড়া। নানা কারণে এসব খাতের বেশির ভাগের রফতানি আয় বহু দিন আগে থেকে কমে আসছে। অপর দিকে, গত কয়েক দশকে তৈরী পোশাক, প্রবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্স এবং হিমায়িত মৎস্যÑ এ তিনটি খাত বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎসের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি ঐতিহ্যবাহী খাতগুলোর সম্ভাবনার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারি, তাহলে দেশের রফতানি আয় অনেক বাড়বে। তা ছাড়া, পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্সের ওপর ভবিষ্যতে কতটা নির্ভর করা যাবে, তা বলা সহজ নয়। কারণ, এসব খাতের অবস্থা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।
আমরা আশা করি, সরকার রফতানি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বিশেষত পাট ও চামড়া খাতের আয় বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement