২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বেকারের সংখ্যা দেশে এক কোটি

কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে এখনই

-

দেশের জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়ছে বেকারের সংখ্যাও। প্রায় এক কোটি লোক এখন বেকার বা অর্ধবেকার। প্রতি বছর কাজের খোঁজে শ্রমবাজারে ঢুকছেন ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষ। অর্থাৎ, আগামী পাঁচ বছরে সরকারকে নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এক কোটি ২০ লাখের মতো লোকেরা। নতুন সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার করেছে। তার মানে, এই সরকার বছরে অন্তত ৩০ লাখ চাকরির সুযোগ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবসম্মত, তা বিবেচনার দাবি রাখে।
পত্রিকান্তরে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, দেশে গত ১৫ বছরে কাজ পেয়েছেন মোট এক কোটি ৪৫ লাখ লোক। ওই সময়ে প্রতি বছর গড়ে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ৯ লাখ ৬৬ হাজার। আর ২০১৩-২০১৭ সালে কর্মসংস্থানের হার নেমে গিয়েছিল পৌনে সাত লাখে। বোঝা যাচ্ছে, প্রতি বছর শ্রমবাজারে যোগ হওয়া কর্মীর সংখ্যার সাথে সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সক্ষমতার একটা বড় ধরনের ব্যবধান থেকে গেছে। ফলে ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম শ্রমশক্তির মধ্যে বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি লোক বেকার বা ‘ছদ্ম’বেকার। পাশাপাশি আরো যে শ্রমশক্তি শ্রমবাজারে আসবে, তাদের কাজের সুযোগ করে দিতে হলে সরকারকে প্রতি বছর অন্তত চারগুণ বেশি চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থনীতির বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এই লক্ষ্য অর্জন কতটা সম্ভব তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
ভালো চাকরি না পেয়ে অনেকে বেকার থাকছেন বা খণ্ডকালীন ছোটখাটো কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন। শিক্ষিত বেকারদের অনেকেই রাইড শেয়ারিং ও কলসেন্টারে কাজ বা দোকানের সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে ফুটপাথে হকারি করছেন। এমন খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত তরুণের সংখ্যা প্রচুর। তাদের জন্যও ভালো কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কী ধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং তাতে কী ধরনের শিক্ষিত জনশক্তির প্রয়োজন, সে সম্পর্কে উপযুক্ত সমীক্ষা হওয়া দরকার।
সমাজের অগ্রগতির সাথে সাথে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার ঘটে। গড়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট শিল্প। জনজীবনেও প্রযুক্তিনির্ভরতা সৃষ্টি হয়। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে পরিষেবা বাড়তেই থাকবে। লাগবে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রমশক্তি। স্বল্প ও আধা শিক্ষিত লোকদের মাধ্যমে এ জন্য কর্মশক্তির জোগান দেয়া সম্ভব। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বেশ কিছু কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ৩৩টি জেলায় রয়েছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমাধারীদের বিদেশে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ রয়েছে। তখন দেশে বেকারের চাপ কিছু কমতে পারে। আসবে অর্থনীতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্সও। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী সর্বপ্রধান খাত গার্মেন্ট শিল্পে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন দিন দিন বাড়বে। সেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। যে দেশ গার্মেন্ট রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়, সেই দেশে একটি মাত্র টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় মোটেও যথেষ্ট নয়। দেশের সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা উচিত। গার্মেন্টের মতো শ্রমঘন আরো শিল্প খাত যাতে বিকশিত হতে পারে, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সম্ভব হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement