২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাজধানীতে পাবলিক টয়লেট অপর্যাপ্ত

পথচারী ও নারীদের মারাত্মক দুর্ভোগ

-

প্রতিদিন নানা কাজে লাখো মানুষ ঢাকা মহানগরীতে আসেন বাইরে থেকে। আর রাজধানীর অসংখ্য বাসিন্দা তো আছেনই, যাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে নিত্য চলাচল করতে হয়। এই লাখ লাখ নাগরিকের একটি বিরাট অংশই নারী। অথচ নারীসহ পথচারীদের দীর্ঘ দিন ধরে ভীষণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে টয়লেটের অভাবে। এর পরিণামে অনেকেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অকালে প্রাণও হারাচ্ছেন। তবুও কর্তৃপক্ষকে এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।
একটি জাতীয় দৈনিকে এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মানুষের দুর্ভোগ তুলে ধরে জানানো হয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় ৩৭টি এবং দক্ষিণের এলাকায় ৫৩টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। তবে এগুলো শুধু যে অপর্যাপ্ত এবং সাধারণত অপরিষ্কার তা নয়; এসব টয়লেটের ২০ শতাংশেরও কম নারীদের ব্যবহারের অনুকূল। সিটি করপোরেশন যদিও ৪৭টি নতুন টয়লেট তৈরি করার কথা বলেছে, রাজধানীতে টয়লেটের সংখ্যা প্রায় ৭০টি থেকে বেড়ে মাত্র ৯০টিতে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ ১৭টি টয়লেট সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছে। ‘জায়গা না থাকা’য় টয়লেটের সংখ্যা মোট ১০০টি করা যাচ্ছে না বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা শহরে মাত্র শ’খানেক পাবলিক টয়লেট যথেষ্ট বলার কোনো অবকাশ নেই। তদুপরি, জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং বাস্তবে জনজীবনে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা থাকায় বাইরে তাদের যাতায়াত অনেক বেড়েছে। কিন্তু নারীর ব্যবহার উপযোগী টয়লেট আছে হাতেগোনা কয়েকটি। এ কারণে তাদের কাছ থেকে কম সেবামূল্য গ্রহণের পাশাপাশি নারীবান্ধব টয়লেট বাড়াতে জোর তাগিদ দিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।
পাবলিক টয়লেটের বেহাল দশা দেখে কর্মজীবী ও পথচারী নারীরা সেগুলো এড়িয়ে চলেন। এ জন্য তাদের শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত চড়া মাশুল দিতে হয়। পুরুষেরা প্রয়োজনে মসজিদ, শপিংমল, হাসপাতাল বা কোনো অফিসের টয়লেট ব্যবহার করা সম্ভব হলেও জরুরি প্রয়োজনেও এটা মহিলাদের জন্য সহজ নয়। এ কারণে তারা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে পানি খান কম এবং বাইরে পানির মতো অপরিহার্য জিনিস এড়িয়ে চলতে চান। এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করায় তাদের একটা বড় অংশই কিডনিসহ মারাত্মক নানা রোগের শিকার হচ্ছেন। তাদের অনেকে পাবলিক টয়লেটের অবস্থান সম্পর্কেও অবগত নন।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধু সাধারণ নারীই নন, নারী ট্রাফিক পুলিশের সমস্যাও কম নয়। একনাগাড়ে আট ঘণ্টা ডিউটি করার সময় তাদের জন্য টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা থাকে না। বিশেষত অফিস বা মার্কেট ভবন বন্ধ থাকলে টয়লেটের সমস্যায় পথচারীদের, বিশেষত নারীদের চরম অসুবিধা ঘটে। পাবলিক টয়লেটের সেবামূল্য অধিক হওয়া, নারীদের টয়লেটে পুরুষের যাতায়াত, নিরাপত্তাহীন ও নোংরা পরিবেশ, প্রভৃতি অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরে আছে পাবলিক টয়লেটের ব্যাপারে। ডিএনসিসি সূত্র বলেছে, ঢাকা শহরে টয়লেট অনেক কম। পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ‘ওয়াটার এইড’ সংস্থা যৌথভাবে টয়লেট স্থাপনের কাজ করছে। তারা নারীদের জন্য সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসার সহায়তা নিয়ে ঢাকায় ২০টি আধুনিক টয়লেট বানিয়ে দিচ্ছেন। জুন মাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে।
এ দিকে, গাইনি চিকিৎসকেরা নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেটের অপরিহার্যতা তুলে ধরে জানান, ‘ঘরের বাইরে গেলেই নারীদের প্রত্যেককে টয়লেটের সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে অনেকে দুরারোগ্য ব্যাধিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’ পরিবেশবিদেরা বিশেষ করে বিপুল ভাসমান দরিদ্র মানুষের জন্য টয়লেট সুবিধা প্রদানকে গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্যথায়, শহরের সৌন্দর্যই শুধু নয়, পরিবেশ বিপন্ন হবে বলেও তাদের অভিমত।
আমাদের প্রত্যাশা, নারীসহ জনগণের ব্যাপক দুর্ভোগ এবং রাজধানীর পরিবেশের কথা ভেবে অবিলম্বে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট স্থাপনের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement