২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
কবে হবে এর অবসান?

গুম, খুন ও লাশের মিছিল

-

গুম, খুন, অপহরণ ও লাশ হওয়ার ব্যাপারটি এখন বাংলাদেশের জনজীবনে নিত্যদিনের বিষয় হয়ে উঠেছে। কিছুতেই যেন এসব অপরাধ থামার নয়। বরং সময়ের সাথে তা বেড়েই চলেছে। মাঝে মধ্যেই গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের ওপর বিভিন্ন উদ্বেগজনক প্রতিবেদন প্রকাশ এবং এর প্রতিকার দাবি করা হলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ব্যাপারটি যেন আমাদের গা-সহা হয়ে উঠেছে। কিন্তু যে বাবা, মা, ভাই, বোন এভাবে তাদের স্বজন হারাছেন তারাই বুঝতে পারেন এভাবে প্রিয়জন হারানো কী দুঃসহ এক অভিজ্ঞতা। এদের মাঝে মধ্যে এভাবে হারানো স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাতে দেখা যায় প্রেস ক্লাবে কিংবা অন্য কোথাও কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজে আসছে না। বরং এই অপরাধ এখন আমাদের জাতীয় জীবনে স্থায়ী রূপ নিয়েছে বলেই মনে হয়।
গতকালের জাতীয় দৈনিকগুলোয় এ ধরনের বেশ কয়েকটি গুম, খুন, লাশ ও অপহরণ হওয়ার খবর প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। একটি জাতীয় দৈনিক জানিয়েছেÑ নাটোরে আইনশ্ঙ্খৃলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এক যুবলীগ নেতাকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনার পর গত শুক্রবার তাকে উদ্ধারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ করেছেন তার সমর্থকেরা। দুই দফা কয়েক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। তবে জামিল হোসেন নামে এই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর, জমি, জলাশয় দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা রয়েছে ১৩টি।
এদিকে লৌহজংয়ে নিখোঁজ এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে আটক করেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সে নিখোঁজ ছিল। আটক আলাল (১৭) ও রাব্বি (১৮) নিহত নীরবের সহপাঠি। এদিকে ফেনীতে শহরতলীর কালিদহ ইউনিয়নের আলোকদিয়া রাস্তার পাশে গত পরশু ভোরে পড়ে থাকে এক অজ্ঞাত লাশ। তার সারা দেহে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। তা ছাড়া ফেনী শহরের পাঠানবাড়িসংলগ্ন স্থানে নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হয় স্কুলছাত্র আরাফাত হোসেন। তার খুনের দায় স্বীকার করেছে প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন। একই দিনে নয়া দিগন্তের খবরে জানা যায়, গত পরশু দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানিগঞ্জ ইউনিয়নে মরা করতোয়া নদীর কচুরিপানার নিচ থেকে রেহেনা খাতুন (২৭) নামে এক গৃহবধূর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গতকালের জাতীয় দৈনিকগুলোয় এমনি ধরনের আরো ঘটনার কথা জানা যায়।
সহজেই অনুমেয়, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবনে বিরাজ করছে এক দুঃসহ অস্থিরতা। আর এই অস্থিরতা সূত্রে সমাজে ঘটে চলেছে নানামাত্রিক খুন, গুম, অপহরণসহ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এসব ঘটনা থেকে মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরসহ দেশী-বিদেশী অনেক মানবাধিকার সংস্থা এর প্রতিকার চেয়ে সরকারের কাছে বারবার নানা সুপারিশ রেখেছে। কিন্তু সরকারি মহলের ভাষ্য যেন এমনÑ সবকিছু ঠিকই আছে। ফলে বিভিন্ন মহলের পরামর্শ আমলে নিয়ে এসব দুঃসহ অপরাধ রোধে পদক্ষেপ নিতে সরকারি মহল যেন অনীহ। কিন্তু সময়ের সাথে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আরো তীব্র হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, বিষয়টি আর এড়িয়ে চলার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের উচিত জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।


আরো সংবাদ



premium cement