১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বায়ুদূষণে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক

দূষণ রোধে জরুরি কর্মসূচি প্রয়োজন

-

বিশ্বে যেসব কারণে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, বায়ুদূষণ এর অন্যতম। বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় চীনে। দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। রাশিয়া আর পাকিস্তানের পরই রয়েছে বাংলাদেশ। এই তথ্য আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদ্বেগজনক।
নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ শুধু ২০১৫ সালে বিশ্বে ৪২ লাখ মানুষ মারা গেছে বায়ুদূষণে। ওই বছর চীনে মারা গেছে ১১ লাখ আট হাজার ১০০ জন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় মারা গেছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৫০০, পাকিস্তানে এক লাখ ৩৫ হাজার ও যুক্তরাষ্ট্রে ৮৮ হাজার মানুষ। আর আমাদের দেশে বছরে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বায়ুদূষণে।
এ জন্য দায়ী পার্টিকুলেট মেটার (পিএম) ২ দশমিক ৫। এই পিএম ২ দশমিক ৫ শ্বাসের মাধ্যমে শরীরের অত্যাবশ্যক অঙ্গে প্রবেশ করে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক ও ক্যান্সারসহ শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘœ ঘটায়। বায়ুতে ক্ষতিকর উপাদানের মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর পিএম ২ দশমিক ৫। পার্টিকুলেট মেটার ২ দশমিক ৫ ছড়িয়ে পড়ে গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়া, ইটভাটা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কারখানা, কৃষিভিত্তিক কাজ, নির্মাণকাজ এবং রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা ধুলা থেকে। যন্ত্র থেকে ছড়িয়ে পড়া ধুলা ও ধোঁয়া থেকে সূক্ষ্ম কণাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বায়ুদূষণ হয় ব্যাপক মাত্রায়।
আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি। বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি। বায়ুদূষণ বড় ধরনের স্বাস্থ্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকাবাসীর জন্য। এ শহরের বায়ু বিষে ভরা, বিপজ্জনক ও অস্বাস্থ্যকর।
ঢাকায় নানাভাবে বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। নির্মাণকাজের ধুলা, গাড়ির নির্গত ধোঁয়া, ময়লা-আবর্জনা থেকে উদগত জীবাণুতে এ শহরের বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। সাধারণত শুষ্ক মওসুমে ইটভাটা চালু এবং ব্যাপক উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় ঢাকায় দূষণের মাত্রা বেশি। তবে বর্ষায় একটু কমে। ঢাকার চারপাশে রয়েছে প্রচুর ইটভাটা ও কলকারখানা। শুষ্ক মওসুমে নির্মাণসামগ্রী বিশেষ করে ইট ও বালু সকাল-বিকেল পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখার নির্দেশ রয়েছে; অথচ এ নির্দেশ মানা হয় না।
আমাদের দেশের শহরগুলোয় বিশেষ করে ঢাকায় ধুলা ও ধোঁয়া থেকে যে পার্টিকুলেট বস্তু বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, তা থেকে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ হয়ে থাকে ঢাকাবাসীর। রাজধানীর বস্তি এলাকায় চুলার ধোঁয়া থেকেও বস্তিবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বস্তিবাসীর মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে বিভিন্ন সংক্রমণ বেশি। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও ধোঁয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধুলা ও ধোঁয়ায় প্রথমে ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে। চিকিৎসা না হলে অথবা ধুলা ও ধোঁয়া থেকে দূরে থাকতে না পারলে প্রথমে শ্বাসকষ্ট অথবা হাঁপানি হতে পারে। এটি দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে ক্যান্সারও হতে পারে।
ঢাকার বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা সহনীয়পর্যায়ে আনতে হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয়সংখ্যক গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আর পরিবেশবাদীরা ইটভাটাগুলো আধুনিকায়নের কথা বলছেন অনেক আগে থেকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে ইট তৈরি না করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের দাবি তাদের দীর্ঘ দিনের। কিছু ইটভাটা পরিবেশসম্মত ইট উৎপাদন করছে। তবে বেশির ভাগ ইটভাটায় এখনো সনাতন পদ্ধতিতে ইট তৈরি হয়। ফলে দেশে এখনো বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা।
দেশে বায়ুদূষণের মাত্রা দুঃসহ। তা সহনীয়পর্যায়ে আনতে দ্রুত কার্যকর কর্মসূচি নেয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতর পুরনো পদ্ধতিতে ইট তৈরি আইন করে বন্ধ করলে দেশে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকাংশে কমবে। আর নির্মাণকর্মীসহ ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিবেশ দূষণের বিষয়ে সচেতন করলে তারা সতর্ক হতে পারেন। প্রচলিত আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে অন্ততপক্ষে ধুলোবালু ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হবে। এতে দূষণ সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব। সর্বোপরি বায়ুদূষণের ব্যাপারে দেশবাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার

সকল