দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা পেতে হবে
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
জালের মতো ছড়িয়ে থাকায় বলা হয় নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এ দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের সবচেয়ে বড় উপাদান নদী। ঐতিহাসিক কাল থেকে নদীকে কেন্দ্র করে এ দেশে সমাজ সভ্যতা গড়ে উঠেছে। জীবন জীবিকার ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে নদী। দুর্ভাগ্য, মানুষ নদী রক্ষা করার পরিবর্তে এর ওপর খড়গহস্ত হয়েছে। দুইভাবে এ দেশের নদ-নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনপদের মানুষেরা এর ওপর অনাচার চালিয়েছে। অন্য দিকে, নদীর উজানে পানির স্রোতধারায় বিঘœ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রধান প্রধান নদী প্রবাহিত হয়েছে ভারত থেকে। এই বেশির ভাগ নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার আগেই পানি প্রত্যাহার করা হয়েছে। উজানের পানি প্রত্যাহার ও জনপদের মানুষের অত্যাচারে বেশির ভাগ নদী আজ মৃত্যুমুখে পতিত। এখন এ দেশকে নদীমাতৃক বাংলাদেশ বলার কোনো সুযোগ নেই।
সচেতন মানুষের একটা অংশ নদী রক্ষায় সক্রিয় হয়েছেন। তারা উপলব্ধি করতে পারছেন এসব নদী একেবারে মরে নিঃশেষ হয়ে গেলে মানুষও যারপরনাই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন মানুষেরা বারবার দাবি করছে নদী রক্ষার। বাস্তবে নদীগুলো উজানের পানি প্রত্যাহারের কারণে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে দখল ও দূষণের মাধ্যমে। সারা দেশে নদী দখলের উৎসব চলছে। কোথাও কোথাও বাঁধ দিয়ে মাছচাষ হচ্ছে। তবে সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে। প্রভাবশালীরা নদী দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করছে। কোথাও কোথাও ব্যবসা বাণিজ্যি করার জন্যও নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নদী মরতে বসেছে। ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের আশপাশে নদীর জন্য আরেক ফাঁড়া হচ্ছে দূষণ। আমাদের দেশে কলকারখানা গড়ে উঠেছে শহর ও এর আশপাশে। কলকারখানা থেকে দূষিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ঢাকা শহরের মধ্যে ও আশাপাশ দিয়ে বয়ে চলা চারটি নদীর পানি ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে। কোনো ধরনের শোধন ছাড়াই কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়ার ফলে এসব নদীর পানি বিবর্ণ হয়ে গেছে। মাছ, জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদও মরে গেছে। এসব নদীর পানি এখন মানুষের জন্যও ক্ষতিকর। সারা দেশের শহরের আশপাশ দিয়ে বয়ে চলা সব নদীর অবস্থা কমবেশি এ ধরনের দূষণের শিকার। নদী রক্ষার তাগিদে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। বুধবার এক রায়ে আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর ফলে নদী মানুষের মতো আইনি অধিকার ভোগ করবে। এর ফলে দখল দূষণসহ নদীর বিরুদ্ধে করা অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়ার আইনি সুযোগ হলো। এর আগে আরেক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নদী রক্ষার জন্য একটি কমিশন গঠন হয়েছিল। দুখঃজনক হলো, ওই কমিশন শুধু সুপারিশ করতে পারে।
আদালত নদী দখল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে। আদালত বলেন, ‘নদী দখল করা হচ্ছে, আমরা নির্দেশ দিচ্ছি, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে। কয়েক দিন নিরিবিলি থাকার পর আবার দখল শুরু হচ্ছে। এই কানামাছি খেলা বন্ধ করা উচিত।’ দখলদারেরা কতটা শক্তিশালী আদালতের বক্তব্য থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা মনে করি, শুধু দখল নয়, দূষণের ব্যাপারেও কঠোর ব্যবস্থা দরকার। নদী কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। দখল ও দূষণÑ এই দুই থেকে নদী বাঁচাতে হবে। শুধু ঢাকা নয় সারা দেশের নদীর স্বাভাবিক গতিধারা নিয়ে কাজ করতে হবে। নদীর জীবন রক্ষার মাধ্যমে আবার নদীমাতৃক বাংলাদেশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা