২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ

অঙ্গীকারের পুরোপুরি বাস্তবায়ন হোক

-

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে গত শনিবার রাজধানীতে বিজয় সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। তাতে বিপুল জনসমাগম হয়েছে। বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে যোগ দেন আওয়ামী লীগ এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থকরা। যোগ দেন বহু নগরবাসীও।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার দলকে আবারো দেশ সেবার সুযোগ দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সভাপতির ভাষণে তিনি কয়েকটি অতি জরুরি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বিজয় পাওয়া যত কঠিন, সেই বিজয় রক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করা আরো কঠিন। সেই কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, তা পালন করতে হবে। জনগণের ভোটের সম্মান যেন থাকে সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার সবার জন্য কাজ করবে। সেখানে কোনো দল-মত দেখা হবে না। যারা ভোট দিয়েছেন বা যারা ভোট দেননি তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবার জন্য কাজ করবে। উন্নয়নের জন্য কাজ করবে, রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে।’
আসলে এটাই হলো গণতন্ত্রের মূল চেতনা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে নির্বাচিত হয়ে গঠিত হয় সরকার। কিন্তু যারা ভোট দেননি তাদেরও সম্মতি থাকে প্রকৃত অর্থে, নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব পালনের পক্ষে। আর সরকারও তখন হয়ে যায় সব মানুষের সরকার। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠীগত পরিচয় নির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করাই গণতান্ত্রিকব্যবস্থায় সরকারের প্রধান দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী সেই দায়িত্বের কথা স্মরণ করেছেন।
জনগণের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার যে ওয়াদা প্রধানমন্ত্রী করেছেন, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সাথে বলা দরকার, আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের শাসনকালে এই বিষয়টি উপেক্ষিত শুধু নয়, বরং হরণ করা হয়েছে। মানুষের কথা বলার, সভা-সমাবেশ করার, বিক্ষোভ প্রদর্শন বা মিছিলের যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকার সেটি অনেকটাই খর্ব করেছে। সরকারের বিশেষ এজেন্সিগুলোর সংশ্লিষ্টতায় গুম খুনের বেশ কিছু ঘটনাও ওই সময়কালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে থেকে যাবে।
সেই অবস্থান থেকে সরে এসে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার যদি সত্যিই জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার প্রভৃতি নিশ্চিত করতে কাজ করে তাহলে সেটা আখেরে দলটির জন্যও মঙ্গলজনক হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনের অভূতপূর্ব জয় পেয়েছে শেখ হাসিনার দল। নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে বিরোধী দল ও পর্যবেক্ষকদের ভিন্নমত আছে। এ প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলের অনেকে বলেছেন, ‘নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে যে নৈতিক পরাজয় হয়েছে তা ঢাকা দেয়ার জন্যই ক্ষমতাসীন দল এই বিজয় সমাবেশের আয়োজন করেছে।’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজের পর্যবেক্ষণ যে কেউ প্রকাশ করতে পারেন। বিরোধী দলের এই বক্তব্য তাই অপ্রত্যাশিত নয়। আমরা বিতর্কের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা এবং জাতির এগিয়ে যাওয়ার এই সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ করা সরকারের কর্তব্য। দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা জনগণকে দেয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। এই লক্ষ্যে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আমরা বর্তমানকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উৎসর্গ করি যাতে তারা একটি উন্নত ও সুন্দর জীবন পায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে অঙ্গীকার করেছি, সেই অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’
আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে আস্থা রাখতে চাই। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে তার এই প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে কার্যকর হলে বড় ভূমিকা রাখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।


আরো সংবাদ



premium cement