২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বললেন, নির্বাচন সঠিক হয়নি

বিতর্কের অবসান করতে হবে সরকারকেই

-

বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবার। সম্ভবত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই ধরনের নির্বাচন একেবারে বিরল। দৃশ্যত ভোটার উপস্থিতি ও ভোটের আয়োজন অনেক জায়গায় ছিল। অনেক ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের লম্বা লাইনও দেখা গেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সাথে এদিক দিয়ে এই নির্বাচনের পার্থক্য। সেই নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হননি। গড় ভোটের হার ৫ শতাংশও ছিল না। এবার ভোটাররা অনেক জায়গায় কেন্দ্রে যেতে চেয়েছেন। কোথাও কোথাও অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে কেন্দ্রেও পৌঁছেছেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। আবার অনেক জায়গায় বাড়িঘর থেকে সাধারণ ভোটাররা বেরই হতে পারেননি; কিন্তু ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে লম্বা লাইন। লম্বা লাইনের হেতুটা পরে বোঝা গেছে। কিছু সংখ্যক মানুষ ভোটের দিন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এটা ছিল তাদের কাজ। যাতে করে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের দেখানো যায় স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন হচ্ছে। টিআইবির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। ৫০টি আসনের মধ্যে ৩৩টি আসনেই আগের রাতে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচন হয়নি।’ ২০১৯ সালে গুতেরেসের কর্মপন্থা নিয়ে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশে কোনো সঠিক নির্বাচন হয়নি। এ অবস্থায় তিনি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক পক্ষকে এ বিষয়ে কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে আহ্বান জানান। বিশ্বসংস্থা জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। সংস্থাটির প্রধানের এমন বক্তব্য কোনোভাবে সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট পরিচালিত ১৭টি সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়নি ক্ষমতাসীন সরকার। গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের পরিপূর্ণ পর্যবেক্ষণ টিম পাঠায়নি। বাছাই প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে বাইরের পর্যবেক্ষকদের আগমন আরো সঙ্কুচিত করা হয়েছে। দেশীয় পর্যবেক্ষকদের সংখ্যাও এবার অনেক কম ছিল। নির্বাচন কমিশন ছাঁটাই বাছাই করে অনেক পর্যবেক্ষককে বাদ দেয়। সাংবাদিকদের অবাধে চলাচলও সীমিত করে রাখার চেষ্টা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন কেন এ ধরনের চাপাচাপি করেছিল সেটা এক রহস্যজনক বিষয়। যেখানে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে বিশ্ববাসীকে দেখানোর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে, সেখানে তারা নিজেদের আরো বিতর্কিত করেছে। সর্বশেষ টিআইবি যখন কারচুপির তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে চাইল, নির্বাচন কমিশন সেটা মুখের কথা দিয়ে উড়িয়ে দিতে চাইল। সর্বোপরি এই নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিশন সর্বদাই সরকারের সাথে হাত ধরাধরি করে চলেছে। কারচুপি ঠেকিয়ে যেখানে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দেয়া কমিশনের দায়িত্ব, সেখানে কমিশন নিজেই কারচুপি জায়েজ করার পক্ষে সাফাই গাইছে।
এবারের নির্বাচন নিয়ে দেশের সামগ্রিক মিডিয়াও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ক্ষেত্রে মিডিয়ার বড় অংশ নির্বাচনের খবর দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান মাথায় রেখেছে। মিডিয়ার এমন অবস্থায় সামগ্রিক নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটাররা নিজেদের ভোট দিতে এসে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হলেও প্রকৃত ব্যাপারটি যেমন বলতে পারেননি, একইভাবে সারা দেশে কী হয়েছে খোলাসা করে সেটাও জানতে পারেননি। কারচুপির বিষয়টি মিডিয়ায় না এলেও স্পষ্ট হয়ে যায় ভোটের ফলাফল দেখে। এ ফলাফল ছিল কল্পনাতীত। যেখানে মহাজোটের প্রার্থীর ভোট কয়েক লাখ সেখানে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল কয়েক হাজার। এ ধরনের ফলাফল অবিশ্বাস্য। শেষ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের মন্তব্যেও এর স্বীকৃতি মিলল। অর্থাৎ ভোটের প্রকৃত চিত্র ভেতরে ভেতরে সবার জানা হয়ে গেছে। আমরা মনে করি, সরকার নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করলে এখন এই বিতর্কিত নির্বাচনের অপনোদন করতে উদ্যোগী হবে।


আরো সংবাদ



premium cement